অসামাজিক কাজে বাঁধা দেওয়ায় মসজিদ সভাপতির বাড়িতে হামলা
প্রকাশ্য অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত এক মেয়েকে বাধা প্রদান করায় ফরিদগঞ্জে মসজিদ কমিটির সভাপতির বাড়িতে বখাটেদের দিয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ালী গ্রামে। শীল বাড়ির আবু তাহেরের মেয়ে জান্নাত আক্তার পপির দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জান্নাত আক্তার পপির মা নিরুপায় হয়ে ছিদ্দিক আলী জামে মসজিদের সভাপতি, বিশিষ্ট বাজার ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন গাজীকে জানান। মেয়ে তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছেন বলে পপির মা দাবী করেন।
প্রকাশ্য অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার বিষয়ে গ্রামের সম্মানহানির কথা বিবেচনা করে ২২ নভেম্বর পপির বাবা আবু তাহেরকে ডেকে মেয়ের শাসন করার জন্য সামাজিক ভাবে জানানো হয়। বাবার কাছে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি টের পেয়ে জান্নাত আক্তার পপি তেড়ে আসেন মসজিদ কমিটির সভাপতির দিকে। পপি দাবী করেন, এখন ২০২৪ সাল চলছে। আমার ঘরে কোন ছেলে আসবে কি আসবে না তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়। তাতে কার কী আসে যায়? তাৎক্ষণিক মেয়েকে শাসন করার জন্য তার অভিভাবকের উপস্থিতিতে পপির গালে চড় দিয়ে বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে যা ইচ্ছে তা না করতে বলেন বিল্লাল হোসেন গাজী।
এ ঘটনায় পপি আক্তার তিলকে তাল বানিয়ে বেদম প্রহার ও নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন গাজী, তার স্ত্রী রেহানা বেগম ও তার ছোট ছেলে মোঃ নূরুন্নবীর নামে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে পপি উল্লেখ করেন, বিল্লাল হোসেন গাজী ও তার ছোট ছেলে পপির বাবা আবু তাহেরকে অপহরণ করে আটকে রাখেন। সে তার বাবাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকে বেদম প্রহার করে নারী নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফরিদগঞ্জ থানা থেকে দুই পুলিশ কনস্টেবল শনিবার বিল্লাল হোসেন গাজীর বাড়িতে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুই পক্ষকে থানায় ডাকেন তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই (নিঃ) মোঃ নূর নবী। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিল্লাল হোসেন গাজী যখন থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই এক দল হেলমেট পড়া যুবক সন্ত্রাসী কায়দায় বিল্লাল হোসেন গাজীর বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তার স্ত্রী, ছোট মেয়ে ও দুই ছেলের বউকে ঘরে আটকে রেখে বাইরে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে স্বপরিবারে হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসলে ঘরের পাশে পাকঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। যাওয়ার সময় বিল্লাল গাজীর বসত ঘরে কুপিয়ে সব মালামাল তছনছ করে যায়।
বিল্লাল হোসেন গাজীর ছোট ছেলে মোঃ নূরুন্নবী জানান, আমার বাবা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অভিযুক্ত জান্নাত আক্তার পপির সকল কুকর্মের কথা ফাঁস করতে থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে বাবা যেন থানায় না যেতে পারেন তাই জান্নাত আক্তার পপির নির্দেষে আমাদের পুরো পরিবারকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে আগুন জালিয়ে স্বপরিবারে হত্যা করার চেষ্টা চালায় পপির অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গীগণ।
এ বিষয়ে মোঃ নূরুন্নবী বাদী হয়ে ২৬ নভেম্বর জান্নাত আক্তার পপি, তার বাবা আবু তাহের সরকার ও ভাই তসলিম সরকারের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অফিযোগ করেন। গতকাল ২৭ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বিল্লাল গাজীর আগুনে পোড়া বসত বাড়ি ও হামলার স্থান পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জান্নাত আক্তার পপি জানান,বাড়িতে হামলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাসায় আমার খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, চাচাতো ভাই, জেঠাতো ভাইরা আসেন। তারা আমার খোঁজ খবর নিতে আসেন অন্য কিছু নয়।
ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই (নিঃ) মোঃ নূরুন্নবী জানান, জান্নাত আক্তার পপি ফরিদগঞ্জ থানায় বিল্লাল হোসেন গাজী, তার স্ত্রী ও ছোট ছেলের নামে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে আমি সরজমিন তদন্তে যাই। দুইপক্ষকে ২৬ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরিদগঞ্জ থানায় ডাকি। ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় জানতে পারি বিল্লাল হোসেন গাজীর বাড়িতে কে বা কারা হামলা চালায়। বিল্লাল গাজী দাবী করে জান্নাত আক্তার পপি দুর্বৃত্তদের দিয়ে হামলা চালিয়েছেন। দুইপক্ষের অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়েছে।