হঠাৎ চাঁদপুরে আবাসিক গ্যাস সংকটে চরম, বাসা-বাড়ীতে ভোগান্তি
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
Link Copied!
শহরের চেয়ারম্যান ঘাটের উকিল ভিলার বাসিন্দা ইসরাত জাহান ইভা -- পপুলার বিডিনিউজ
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক লাইন সংযোগে গ্যাসের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে গ্রাহকেরা। কোন ধরণের নোটিশ কিংবা কোম্পানীর পক্ষ থেকে মাইকিং না করায় অনেকে রান্না করতে পারেনি। ফলে হোটেল থেকেই খাবার এনে খেতে হচ্ছে।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে চুলাতে গ্যাস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সকাল ৯টার পরে আরো সংকট দেখা দেয়। এরপর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। সকাল ৯টার পর বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড চাঁদপুর কার্যালয় থেকে খবর নিয়ে জানাগেছে লাইনে সমস্যা এবং মেরামত কাজ চলছে।
গণমাধ্যমেক এই তথ্য নিশ্চিত করেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড চাঁদপুর কার্যালয়ের ম্যানেজার।
গ্যাস সংকটে ভোগান্তির শিকার শহরের মুন্সেফ পাড়ার গৃহিনী সুমনা বেগম বলেন, হঠাৎ গ্যাস সংকটে বিপাকে পড়েছি। যে কারণে আজ দুবেলার খাবার হোটেল থেকে কিনতে হয়েছে। কখন আসবে সেটাও জানিনা।
শহরের চেয়ারম্যান ঘাটের উকিল ভিলার বাসিন্দা ইসরাত জাহান ইভা বলেন, সকালে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে জানলাম গ্যাস থাকবে না। পরে চুলা জ্বালিয়ে দেখি গ্যাসেরসরবরাহ কম। ২ ঘন্টা শেষ হতো সেই রান্না বিকাল গড়িয়ে গেল। একদিকে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া অন্যদিকে গ্যাসবন্ধ। চরম দুরবস্থায় আছি।
শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী রাবে আক্তার বলেন, আগে পরে গ্যাস বন্ধ করার আগে মাইকিং হয়েছে। এবার তাও জানতে পারিনি। যে কারণে চরম বিপাকে পড়েছি। সন্তানদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে হালকা নাস্তা খেয়ে। এরপর দুপুরের খাবার নিয়ে বিপাকে।
স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম বলেন, বাসার চুলা বন্ধ। যে কারণে হোটেল থেকে কিনতে হয়েছে। কখন গ্যাস আসবে সে খবরও পাওয়া যায়নি।
রেস্টুরেন্টে খাবার কিনতে আসা বিলকিস আক্তার বলেন, সকাল বেলা রান্নার কাজে হাত দিয়ে দেখি গ্যাস নেই। রান্না বন্ধ। আমার কাছে দিনটিকে মনে হয়েছে যেন একটি ছুটির দিন। আমরা মেয়েরা সারাক্ষণ চুলার কাছেই থাকি। আমাদের ছুটি নেই। আজ যখন দেখলাম গ্যাস নেই তখন মনে হল যে আমি একদিন ছুটি পেয়েছি। পরিবারের সবার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই বলে মাঝেমধ্যে বাইরে খাওয়া প্রয়োজন। আজ তা প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে গেল।
খাবার কিনতে আসা আরেক ক্রেতা সুজন আহমেদ জানান, সকালে অফিসে এসেছি নাস্তা করতে পারিনি কারণ বাসায় গ্যাস সরবরাহ নেই। কাজের মধ্যে সারাক্ষণ চিন্তায় ছিলাম বাসায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কি খাবে, কখন গ্যাস আসবে তাও জানিনা। মেরামত কাজের জন্য গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকবে তা আগে থেকে অবহিত করা হয়নি। তাই দুর্ভোগের করতে হয়েছে আমার মত অনেককে। অপেক্ষা করে উপায় না পেয়ে ক্লিয়ার করা এখন রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছি।
আবার কিছু কিছু পরিবারে ব্যতিক্রম আয়োজন লক্ষ্য করা গেছে। ঘরের মধ্যে ড্রাম কেটে চুলা বানিয়ে রান্না করতে দেখা গেছে কিছু পরিবারকে।
গ্যাস সংযোগের বিষয়টি শুধুমাত্র ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলেছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। মতামতে কেউ জেনেছেন ক্ষোভ, আবার কেউ করেছেন সমালোচনা। আবার কেউ কেউ নিয়েছেন বিনোদন।
বাখাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক মহিবুর রহমান গ্যাস সংযোগ বিষয়ে জানান, গ্যাস সংযোগ মেরামতের কাজ করছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অফ বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে চলছে এ মেরামত কাজ। তারা আমাদেরকে জানিয়েছে বুধবার রাত পর্যন্ত মেরামত কাজ সমাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি না হয় তাহলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় লাগবে। তারপর গ্যাস সংযোগ পুনরায় স্বাভাবিক হবে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড কুমিল্লা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (হিসাব বিভাগ) সৈকত হোসেন জানান, কোম্পানীর চট্টগ্রাম আনোয়ার ও পৌজদার হাট প্রজক্টের পাইপ লাইনে পাটল দেখা দিয়েছে। মেরামত কাজ চলছে। প্রাকৃতিক কোন সমস্যা না দেখা দিলে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।