কাঠালী চিলড্রেন পার্ক এক অনবদ্য থিম পার্ক
করোনাকালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে মার্চের মাঝামাঝি সময় হতে জুলাই এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দীর্ঘ চারমাস বউ-বাচ্চা সহ গৃহবন্দী। বাচ্চাদের স্কুল এসময়ে বন্ধ রয়েছে। তারাও বায়না ধরছে বাইরে কোথাও যাবে। হাজীগঞ্জে অবসর বিনোদনের জন্যে সুপরিকল্পিত কাঠামো এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। হঠাৎ একটি পার্কের রিভিউ দেখতে পেলাম হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক, বন্ধু প্রতিম সেলিম পাটওয়ারীর ফেসবুক ওয়ালে। কৌতুহলী মন অজানাকে জানতে চায়। শেষ বিকেলে সপরিবারে যাত্রা শুরু করলাম ঐ পার্ক পানে।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার হাজীগঞ্জ – কচুয়া সড়কের পাশে কাঠালী নামক স্থানে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম এক থিম পার্ক।
যদিও কর্তৃপক্ষ এটিকে প্রাথমিকভাবে নামকরণ করেছে “কাঠালী চিলড্রেন পার্ক এন্ড কাবাব হাউজ”। পার্কের শিরোনাম দেখে আমার মতোই যেকারোই মনে হতে পারে এটি শিশুদের বিনোদনের জন্য ডেডিকেটেড একটি পার্ক। পাশাপাশি শিশুদের পার্কে নিয়ে যাওয়া বড়রা কাবাব খেতে পারবে। কিন্তু ভেতরের আয়োজন ও বাস্তবতা তা ছাপিয়ে বহুমাত্রিক শৈল্পিক এক থিম পার্কের প্রতিরুপ পরিলক্ষিত হলো।
শিশুদের রাইডের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশকে এমন শৈল্পিকভাবে সাজানো হয়েছে মনে হবে যেনো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর ” নুহাশ পল্লীর” একাংশে ঢুকে পড়েছেন। পার্কের উঁচুভূমির পশ্চিম প্রান্তে জলরাশির উপর দিয়ে অর্ধচন্দ্র আকৃতির সংযোগ সেতু দিয়ে এগিয়ে গেলে মন জুড়িয়ে গেল মিনি পল্লীর সৌন্দর্য সুধা পান করে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক বৃক্ষরাজিকে নান্দনিকভাবে সযতনে পরিচর্যার মাধ্যমে এমনই এক রুপদান করা হয়েছে মনে হবে যেনো কোনো স্বপ্নপুরীতে ঢুকে পড়েছেন। যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী সেখানে যে থিম পাবেন তা হৃদয়ের গহীনে সতেজতা ছড়াবে।
এই পল্লী হতে বেরিয়ে এসে উত্তর দিকে এগুলেই চোখে পড়বে জীবন্ত অজগর, শেয়াল, খরগোস, বাঁদর, ভোঁদড় থেকে শুরু করে আরো অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রাণী। আরেকটু এগোলে একইপাশে দেখা মিলবে বিচিত্র রকমের পাখীর সমাহার। পাখিদের কিচিরমিচির, ডানা ঝাপটানোর ছন্দময় শব্দতরঙ্গে মনোজগতে আরেক থিমের উন্মেষ ঘটাবে।
আরো কিছু এগিয়ে গেলে নয়নাভিরাম শ্রান্তিবিলাস। দখিনা পবন, হরেক রকমের গুল্মের পরিশীলিত গড়ণ আর বৃক্ষরাজির পত্রপল্লবের অভিবাদনসূচক চঞ্চলতা খরা হৃদয়েও ভাবের জোয়ার বইয়ে দিতে পারে। সেখানে বসে পছন্দের খাবারের ফরমায়েশ করা যায়। অভিজ্ঞ শেফের হাতে প্রস্তুতি চলতে থাকবে সুস্বাদু চিকেন ফ্রাই, চিকেন তন্দুরি, কাবাব, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, স্পেশাল পরোটা কিংবা চটপটি, ফুচকা। এখানকার খাবার মানসম্মত তবে দাম খুবই নাগালে।
বারবারই ভেবেছি এই পার্কটিকে চিলড্রেন পার্ক না বলে থিম পার্ক বলাই যথার্থ হবে। অবসরে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়ার মতো একটি চমৎকার সিলেকশন হবে এ পার্ক।