আমার চেতনায় তুমি নিরন্ত বহমান
ছেলেবেলায় পাঠ্য বাংলায় দেখা, বুকে-হাত বীর- বিপ্লবী কবির এই ছবিটাই সব থেকে বেশি প্রিয় আমার। প্রথম দেখাতেই ছবিটার প্রেমে পড়ে যাই। এরমাঝে দ্রোহ, প্রেম, জয় করবার প্রবল অভিপ্সা, দূরদৃষ্টি কী নেই; ছবিটি যেনো তাঁরই ভাষ্যে ‘একহাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য’-এর চরম প্রতিরূপ!
কিশোরকালে, নজরুলের ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার পাওয়া যেতো বাজারে, সেসবে- ফুলের জলসায় নিরব কেন কবি, বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল, বল বীর বল উন্নত মম শির- এমন বিবিধ পঙক্তি শোভিত থাকতো। আমাদের পুরনো ঘরের পুরনো বেড়ায় আমি দুবার ক্যালেন্ডার কিনে লাগিয়েছিলাম।
অনেক বছর বাদে ঘর বদলের ফলে এখন আর সেই ক্যালেন্ডারের অস্তিত্ব নেই কিন্তু অন্তরের গুলবাগিচায় আজো কবি চিরজাগ্রত আজও নানা অনিয়ম অনাচার দেখে তাঁরই চেতনায় শাণিত হই, আজও উদ্দিপনা পাই তাঁর তুঙ্গস্পর্শী উচ্চারণে। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা শ্রবণের মাধ্যমেই আমার সাহিত্য প্রেমের সূচনা।
ছেলেবেলায় মামার কণ্ঠে নজরুলের কাণ্ডারি হুশিয়ার, খেয়া পারের তরণী, বিদ্রোহী- এসব কবিতার উচ্চারণ রক্তের মধ্যে যে অবোধ্য চেতনার সঞ্চারণ ঘটিয়েছে, সে থেকেই কবিতার প্রতি আমার অনিবার অাকর্ষণ। তারপর, ‘বাদলা কালো স্নিগ্ধা আমার কান্তা এলো রিমঝিমিয়ে…’- রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম আর হৃদয়ে ঝড় তোলা ব্যঞ্জনাময় গজলের বেলোয়ারি তান বাঁধন হারা’র যে উচাটন-মনোভাব জাগিয়েছে তা আজও আমার ভাবলোকে নার্গিস-বনের অনুপম ফল্গুধারা বইয়ে চলেছে।
১২২-তম জন্মদিনে প্রিয় কবিকে স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।