ফরিদগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৮ শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিচ্ছে একজন শিক্ষক দ্বারা!
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
Link Copied!
ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে। বিদ্যালয়ের মাত্র ৪জন শিক্ষকের মধ্যে ২জনের অবসর গ্রহণ, একজন ছুটিতে থাকায় এ দুর্দশা চলছে। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৮ জন। দুই শিফটে ৬ ক্লাসে নিয়মিত সর্বমোট ১০০ থেকে ১০৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকলেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন একজন। পূর্ব ভাওয়ালসহ আশপাশের বিশাল এলাকার জন্য বিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এতে শিক্ষকের সংকট থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে শিক্ষার্থীদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা। প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে ছিলেন ফাতেমা আক্তার নামের একজন সহকারী শিক্ষক। তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। কিছুক্ষণ পর দেখা হয় আব্দুর রহমান নামে আরও একজনের সঙ্গে। তাঁকে ওই বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয় শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সংকটে থাকা এই বিদ্যালয়টিতে ৭জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ৪ জন দিয়ে চলছিল বিদ্যালয়ের পাঠদান। প্রধান শিক্ষক শান্তি রানী ধর অবসরে গেলে ৩ শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালান। এই তিনজনের মধ্যে নুরুন্নাহার নামে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও গত ৩ মাস পূর্বে মৃত্যু বরণ করেন। দুইজন সহকারি শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়টির হাল ধরলেও তানিয়া আক্তার নামের একজন শিক্ষক শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারনে অবসরে চলে যান। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একজন।
বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তার শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে গিয়ে দুর্দশায় পড়েন। তিনি বলেন, এমন প্রেক্ষাপটে একজন অস্থায়ী শিক্ষককে আনা হয়। শিক্ষক না থাকায় সকালে প্রাকপ্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস শুরু করেন। পালা করে অস্থায়ী শিক্ষকের সহযোগিতায় সব কটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে হয় তাঁদের। একইভাবে দ্বিতীয় পালায়ও সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর পালাক্রমে সব কটি শ্রেণিতে গিয়ে পাঠদান করান তাঁরা। ফাতেমা আক্তার আরো বলেন, এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে পাঠদান ও বিদ্যালয়টির দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে তিনি নিজেও মানষিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম রিয়াদ, সোহেল বেপারী, রাশেদুল ইসলাম বলেন, অভিভাবকের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসলেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক না থাকায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গুরুত্বসহকারে নজর দেওয়া উচিত।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফতাবুল ইসলামকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
একজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, বিদ্যালয়টির মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে সত্য, তবে এমন প্রেক্ষাপটে একজন অস্থায়ী শিক্ষককে আনা হয়। বিদ্যালয়টির শিক্ষক পোষ্টিং এর বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার ব্যবস্থা করব।