চাঁদপুরে রিং ছাই জালে বিলুপ্তি হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ
জেলার পদ্মা-মেঘনা নদী ছাড়াও মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী বিভিন্ন উপজেলায় বহমান। যে কারণে নদী সংলগ্ন খাল ও বিলে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পায়। সেচ প্রকল্পের বাহিরে ফসলি জমিতেও উঠে যায় বর্ষার পানি। এই সুযোগে এখন এক শ্রেণীর জেলে এই রিং ছাই জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্টজাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও পোনা ধ্বংস করছে।
জানাগেছে, পুঁটি, শিং, পাবদা, গুলশা, কাজলি, বাতাশি, টেংরা, টাকি, গুতুম, চাপিলা, বাইম, খলিশা, কৈ, বেলে, ভেদা, চান্দা, ছোট চিংড়ি, মলা ও ঢেলা মাছ এসব রিং ছাই জালে বেশী ধরা পড়ে। বর্ষা মৌসুমে পানি আসলেই এ জালের ফাঁদ বেশী পাতা হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানাগেছে, চলতি মাসে সদর উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর বিভিন্ন অংশে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের রিং ছাই ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ ঠিক এই সময়টাতে নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এছাড়াও জেলার কচুয়া, মতলব উত্তর উপজেলায় চলতি মাসে একাধিক অভিযানে লাখ লাখ টাকার রিং ছাই জাল জব্দ এবং আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।
সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের জেলে সিরোপ দাস বলেন, যারা প্রকৃত জেলে তারা কখনও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে না। কিছু লোভী লোক আছে তারা নিষিদ্ধ রিং ছাই জাল ব্যবহার করে। যে কারণে আমাদের এলাকার নদী ও খালে এখন কয়েক ধরণের পুঁটি, মেনি, টেংরা, খইলশা, মলা ও ঢেলাসহ অনেক ছোট মাছের দেখা মিলে না।
চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তছলিম বেপারী বলেন, সরকার যেসব জাল নিষিদ্ধ করেছে তা কোন সময়ই ব্যবহার করা যাবে না। সব জেলেদেরই আইন মানতে হবে। আমরা চরাঞ্চল ও স্থলভাগের জেলেদের সাথে দেখা হলেই এসব রিং ছাই জাল ব্যবহারের জন্য নিষেধ করি। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় শুধুমাত্র মৎস্য বিভাগই নয় দেশের প্রত্যেক নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাত্তার রাঢ়ী বলেন, ছোট প্রজাতির মাছ রক্ষায় উপজেলার মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বেশীরভাগ চরাঞ্চলে এই জাল ব্যবহার হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ রিং ছাই বা চায়না দুয়ারী জাল দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তারে বাধাগ্রস্ত করছে। কারণ বর্ষা মৌসুমে যখন এসব মাছ ডিম ছাড়ার জন্য নতুন পানিতে আসে, তখনই এসব জালে ধরা পড়ে। অসাধু জেলেরা এই সময়টাকে কাজে লাগায়। এসব কারণে দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। দেশের জীব বৈচিত্র রক্ষায় সব শ্রেণী পেশার লোক এগিয়ে আসা দরকার।
সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ জাল সব সময়ের জন্যই নিষিদ্ধ। আমরা সম্প্রতি সময়ে বহু রিং ছাই জাল এবং কারেন্টজাল জব্দ করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসব জাল ব্যবহার হচ্ছে আমাদেরকে তথ্য দিলে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো।