ঢাবিতে আর যেতে চাই না, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে রাজাকার: জাফর ইকবাল
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। হামলাকারীদের শাস্তিসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ‘সাদাসিধে কথা’ নামে নিজের একটি ওয়েবসাইটে বিষয়টি নিয়ে দুই প্যারায় ছোট্ট মতামত লিখেছেন তিনি। তার নিজ হাতে লেখা চিরকুটও সেখানে আপলোড করা হয়েছে।
সেই মতামতে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবো না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।
তিনি আরও লেখেন, আর যে কদিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ঘিরে রোববার (১৪ জুলাই) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে, আমি কে; রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে; স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের খবর ছড়িয়ে পড়লে বুয়েট, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতে একই স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতরা। পরে তারা প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারে আলটিমেটামও দেন। এরপর সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ ইস্যুতে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন।
এ অবস্থায় সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দিনভর উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজনকে ভর্তিও করা হয়।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।