প্রেমের বিয়ে, ইতালি যাওয়া স্ত্রী’র পরকীয়া মানতে পারেনি ইসমাইল
স্বামীর আত্মহনন, পরিবারের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে পুলিশ
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
Link Copied!
দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর ঘর বেঁধেছিলেন রুপা ও ইসমাইল। তা আর বেশিদিন স্থায়ীত্ব হলোনা। ইতালি গিয়ে স্ত্রী রুপা আসক্ত হয়ে পড়লেন পর পুরুষের প্রতি। যা মানতে না পেরে ইসমাইল মোল্লা আত্মহত্যার পথ বেচে নিলেন। ইসামাইলের এ করুন কাহিনী যেন ছায়াছবিকেও হার মানিয়েছে। ইসমাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতে কর্ম জীবন শুরু করেন। বাবা দুলাল মোল্লার স্বপ্ন ছিলো ছেলে অনেক বড় চাকুরী করাবেন। কিন্তু তা আর হলোনা। নিমিষেই তার স্ত্রী পরকিয়ার কারনে দুলাল মোল্লার পরিবারে নেমে এলো অন্ধকার। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা—বাবা। রুপার বহুরুপীতে শেষ হয়ে গেল একটি সংসারের স্বপ্ন।
এমন ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সফর মালী সুগন্ধী মোল্লা বাড়িতে। গেলো ৮ মে দিবাগত রাতে নিজ বাসভবনে আত্মহনন করেন ইসমাইল।
ঘটনার বিবরণ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রুপার সাথে ইসমাইলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি রুপার পরিবার স্বাভাবিক ভাবে মানতে পারেনি। একপর্যায়ে মামলা মোকদ্দমা করেন ইসমাইলের বিরুদ্ধে। বহু ঝামেলার পরে পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকেই রুপার পরিবারের লোকজন নানান ফন্দি আঁকা শত্রু করেন। রুপার বাবা, ভাই— ভাবি ইতালির সিটিজেনশীপ। বিয়ের পরপর ২০২২ সালের ২০ মে রুপার বাবা সু—কৌশলে রুপাকে ইতালি নিয়ে যায় এবং ৬ মাসের মধ্যে ইসমাইলকেও ইতালি নিবেন বলেও আস্বস্ত করে প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা নেন। রুপা ইতালি গিয়ে জানতে পারেন সে ২ মাসের অন্ত:সত্বা। পরবর্তীতে রুপা কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
ইসমাইলের বন্ধু সুজন জানান, ইসমাইল আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলো। সে আমার কাছে প্রায় শেয়ার করতো তার বউ’র সাথে ঝগড়াজাটির বিষয়টি, মুঠো ফোনে কথা হলেই বিবাদে জড়িয়ে পড়তো দু’জন। ইসমাইল প্রায় তার স্ত্রী’র পরকিয়ার বিষয়টি বলতেন এবং ভিডিও কলে তাকে একটি ছেলে দেখাইতো। ইসমাইলের মা আমেনা বেগম জানান, আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি, এমন ঘটনা যেন আর কারো না হয়।
ইসমাইলের বাবা দুলাল মোল্লা জানান, আমার ছেলের ইতালির ভিসা হয়ে গেছে বলে জরুরী ভিত্তিতে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য রুপা ও তার বাবা—মা বলেন। আমি ধার দেনা করে রুপার মায়ের হাতে ৭ লক্ষ টাকা দেই। এর কিছুদিন পরে আমার ছেলে তার শাশুড়ির হাতে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেয়। সর্বমোট তারা আমাদের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় নানান তালবাহানা।
তিনি আরো বলেন, রুপার বাবা— মা, মামা নুরুল্লাহ হাওলাদার, খালু মফিজুল ইসলাম, খালা পারভিন বেগম মিলে শুরু করেন মাষ্টার প্লান। ইসমাইলকে জানিয়ে দেওয়া হয় তোমাকে আর নেওয়া যাবেনা ইতালিতে। অপরদিকে প্লান মাপিক রুপার বাবার পরিচিত এক ছেলেকে রুপার সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেয় এবং তার সাথে বিয়ে দিবেন বলেও ইসমাইল ও আমাকে জানিয়ে দেয়। এরপর থেকেই এসব বিষয় নিয়ে মোবাইলে শুরু রুপা ও ইসমাইল বাকবিতন্ডা। রুপাও এক পর্যায়ে ওই ছেলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে ইসমাইলকে ভিডিও কলে ফোন দিয়ে ওই ছেলে সহ আপত্তিকর দৃশ্য দেখায় এবং বলে তুই মরে যা, না হয় তোর কন্যা সন্তানকে মেরে ফেলবে। এসব নানান অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারনেই এবং তাদের পরোচনায় গত ৮ মে দিবাগত রাতে ইসমাইল আত্মহত্যা করেন।
রুপার মা পারুল বেগম বিবাদ, পরোকীয়া ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ইসমাইলের সাথে সু—সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইসমাইল খুব শিগ্রই ইতালী যাওয়ার কথা ছিলো।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই কুদ্দুছ জানান, আত্মহত্যার প্ররোচনা ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় ইসমাইলের বাবা দুলাল মোল্লা চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের পরিবারের লোকজন বসেন। এতে টাকা পয়সার বিষয়ে কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাটির আরো তদন্ত কাজ চলছে।