প্রতিবন্ধি নূরু হত্যা মামলা: এজাহারভূক্ত না হয়েও কয়েক পরিবার আতংকে
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রামের প্রতিবন্ধি নুরু হত্যা মামলা অগ্রগতি নেই। এখনো চার্জশীট গঠন হয়নি। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। এখনো তদন্ত কাজ শেষ হয়নি।
অপরদিকে এজারভূক্ত না হয়েও কয়েক পরিবার আতংকে রয়েছে। নূরু হত্যার পর ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত কাজ।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী নুরুর ভাতার কার্ড নিয়ে একটি গ্রুপ। আবার প্রতিবন্ধী নুরুর সাথে একস্কুল ছাত্রীকে ইভটিজিং নিয়ে আরেকটি গ্রুপের রোষানলে পড়তে হয়। এছাড়াও ওই এলাকায় একটি রাস্তার কাজের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতা কাউছার ও গোলাম কিবরিয়ার সাথে চরম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ওইসব ঘটনার রেশ না কাটতেই খুন হয় প্রতিবন্ধী নুরু। এজহার ভুক্ত বিবাদী ছাড়াও যাদেরকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সাথে কাউছারের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল।
প্রতিবন্ধী নুরুর মা হোসনেয়ারা বেগম বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলার এজহার কপিতে গোলাম কিবরিয়ার মুঠোফোন নম্বর থাকায় এলাকার জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। মামলায় কাউছার আহম্মেদকে প্রধান আসামী করায় নুরু হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। গোলাম কিবরিয়া ও কাউছার তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে নুরুকে প্রাণ হারাতে হয়।
পুলিশ এজহারের বাহিরে কাউছারের ভাই সরোয়ারকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, সরোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সোহাগ হোসেন মুন্সী, এমরান ফরাজী, ইমান ফরাজী ও আকতার ফরাজী নুরু হত্যায় জড়িত বলে উল্লেখ করে। তারই সূত্রধরে বাকী আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
আদালত থেকে জামিনে আসা সোহাগ হোসেন মুন্সী বলেন, কাউছার ও গোলাম কিবরিয়ার রোষানলে মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। জেলে থাকা অবস্থায় বাবা বিল্লাল মুন্সীকে হারালাম। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নুরু হত্যার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা হোক। পাশাপাশি আমাকে মামলা থেকে মুক্ত করার দাবী জানাই।
সোহাগের মা তাছলিমা ও চাচা ইয়াছিন মুন্সী বলেন, সোহাগকে বিনা দোষে দোষী করে জেলে নিয়েছে। সোহাগের বাবা চিন্তা করতে করতে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়ে গেছে। এখন সোহাগই পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারী। আমরা চাই নুরু হত্যার এই মামলা থেকে সোহাগকে মুক্তি দেয়া হোক।
এদিকে ইউছুফের স্ত্রী ও ভাই সাইফুল বলেন, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউছুফ পাটওয়ারীকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। চার সন্তান নিয়ে এখন বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
এজাহারে নাম না থাকলেও জেলহাজতে যেতে হয়েছে একই গ্রামের এমরান ফরাজী। তিনি বলেন, বিনা কারণে জেলে গিয়ে আমাকে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এক ছোট প্রতিবন্ধি ছেলেটার চিকিৎসা চালাতে পারিনি। আমিও চাই সুষ্ঠু তদন্তে নুরু হত্যাকারীরা চিহ্নিত হোক।
জানতে চাইলে মামলার প্রধান আসামী কাউছারের ভাই সরোয়ার বলেন, আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে ছেড়ে দিবে বলে আদালতে কিছু কথা বলতে বলা হয়। আমাকে শুধু সত্য, সত্য বলতে বলেছে। পরে আমি বুঝতে পারি আমাকে জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে। মামলাটি যখন পিবিআইতে হস্তান্তরিত হয়, তখন আমি পুরো ঘটনা খুলে বলেছি। কিভাবে আমার কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। মুলত নুরু হত্যার সাথে কারা জড়িত এমন কোন কিছু আমার জানা নাই।
জানতে চাইলে কাউছার আহম্মেদ বলেন, মামলাটি একটি রাজনৈতিক নেতার আক্রোশে আমরা আসামী হয়েছি। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নুরু হত্যাকারীরা বেরিয়ে আসবে। এলাকার কয়েক পরিবার নুরু হত্যা মামলা নিয়ে আতংকের মাঝে বসবাস করছে।
মামলার বাদী নুরুর মা ও দুই বোন বলেন, নুরু হত্যার পর কত আপনজন হয়ে আমাদের খবর নিচ্ছে অনেকেই। সবাই আমাদের ভালো চায়- কিন্তু নুরুর কি অপরাধ ছিল। তাকে কারা মেরেছে। এখনো সেই খবর জানতে পারিনি। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে জেলে পাঠালো। তারা এখন জামিনে আছে। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নুরু হত্যাকারীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
এদিকে নুরুর বাবা আবুল বাসার ৫ জনকে আসামী করে আরো একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। নুরু বাবা ও মা দুইজন দুই পক্ষকে নুরু হত্যাকারী হিসেবে দাবী করে আসছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। চাজশীর্ট গঠনের এখনো সময় হয়নি। মামলাটি তদন্ত কাজ শেষ হতে আরো সময় নিতে হচ্ছে। এজহারের বাহিরে অভিযুক্তদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলগেইটে সরোয়ারকে জিজ্ঞাসা বাদ করা হয়েছে। সে কি বলেছে, তা তদন্ত স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৭ মে রাতে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল-এন্নাতলী মাঠের একটি হালটে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নুরুল ইসলাম পাটওয়ারীর (২২) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চশমা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। সে এন্নাতলী পাটওয়ারী বাড়ীর আবুল বাসার ছোট ছেলে।