চেয়ারম্যানদের লাগামহীন বেপরোয়া দৌরাত্ব্য
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তীকাল হতে বিভিন্ন সময়ে সরকার গঠনের পরে দেখা গিয়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের সরাসরি অভিযোগের তীর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠে আসে চাল চুরি, গম চুরি ও অসহায় মানুষকে মারধরসহ নানা অপকর্ম ও সমাজবিরোধী গৃনীত কাজের কথা। যা কিনা অসহায় সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও ভীতির শঙ্কা সৃষ্টি করে। গ্রামের অসহায় মানুষ তাদের নায্য অধিকার পাওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে থাকেন। কিন্তু এই সুযোগটাই কাছে লাগান লালসিত চেয়ারম্যান। এবং বাধ্য হয়ে লালসার শিকার হতে হয় অসহায় মানুষগুলিকে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বর্নণা করলে দেখা যায় যে কতটা বেপরোয় হয়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান’রা। সেখানে দেখা গিয়েছে গরু চুরির অপবাধ দিয়ে একটি পরিবারের মা ও মেয়েকে কোমরে রশি বেধেঁ মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে চেয়ারম্যান নিজেও তাদেরকে মারধর করে। যা কিনা মানব হৃদয়ে হতবাকের নাড়া দিয়ে গিয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যনরা তাদের ক্ষমতা প্রর্দশণ করে স্থানীয় জনগণের মাঝে একটা ভয়ের প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা দলবেধে মোটর সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে মহড়া দিয়ে থাকে। এটি একটি ক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে দেখা যায়। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কিছু কিছু স্থানীয় মাতাব্বার বা মোড়ল থাকেন যারা কিনা সরাসরি চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় চোখঁ হিসেবে কাজ করে থাকে। এই স্থানীয় মাতাব্বরা তাদের নিজ গ্রামের মানুষের বিচার করে থাকেন। গ্রামে কোন চুরি হলে, কেউ কাউকে মারলে অথবা কেউ কারো কোন রকম ক্ষতি করলে প্রথমে এলাকায় বিচার বা সালিশ বসানো হয়। আর এতে বিচারের নেতৃত্ব বা লিড দিয়ে থাকেন স্থানীয় মাতাব্বরা।
এবং স্পষ্টতাই বুঝা যায় যে সেখানে কি ধরণের বিচার হতে পারে। কেউ কেউ হয়তো নায্য বিচার পেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ হয়তো নায্য বিচার পেয়ে থাকেন না। তবে অধিকাংশ স্থানীয় অসহায় জনগণ নায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এই ধরনের স্থানীয় বিচার কাজে যারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন তারা বেশির ভাগই স্থানীয় চেয়ারমান ও মেম্বারদের সাথে একই যোগসাজকসূত্রে কাজ করে থাকেন। কিছু কিছু গ্রাম্য সালিশে চেয়ারম্যান নিজেই উপস্থিত থেকে বিচারকায্য সম্পন্ন করেন। এবং কিছু বিচার ইউনিয়ন পরিষদে চেযারম্যানের সামনে হয়ে থাকে।
আর এই বিচারে যে পক্ষ শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হন তাদের পক্ষেই বেশিরভাগ বিচারের রায় দেয়া হয়। এতে করে অপরপক্ষ অসহায় হয়ে রায় মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাদেরকে বাধ্য করা হয় রায় মেনে নিতে। কিছু অসৎ ইউপি চেয়ারম্যানরা এভাবেই দিনে দিনে অসহায় সাধারণ মানুষের ওপর মিথ্যা অপবাদ, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার করে আসছে। তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে।
সমাজে বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের দেশে যখনই যেই সরকার এসেছে সেই সরকারই সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। নির্বাচন পূর্বক ইশতেহারের প্রতিশ্রæতি এবং পরবর্তী সময়ের কার্যক্রমের কোনো রকম মিল আমরা দেখতে পাই না। সরকারকে অবশ্যই সাধারণ মানুষের নায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তাই পরিশেষে বলতে চাই, অপেক্ষার প্রহর না করে এখনই সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের লাগামহীন বেপরোয়া দৌরাত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং এর অবসান ঘটানো। আর তা যদি না হয় তাহলে সরকার ও সরকারি কাজের ওপর মানুষের আস্থা দিনে দিনে হারিয়ে যাবে। যাতে কিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হুমকির মুখে ধাবিত হবে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা একটি সার্বজনীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের বাংলাদেশকে দেখতে চাই।
লেখক-
মো. মানিক হোসেন
উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক