হাজীগঞ্জে করোনার চেয়ে ভয়ংকর যক্ষা
মনিরুজ্জামান বাবলু
Link Copied!
বিশ্বে করোনার ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তার সাথে অন্যান্য রোগ বালাই ক্রমেই বাড়ছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে যক্ষ্মা রোগের প্রার্দুভাব। গত কয়েক বছর ধরে এই উপজেলায় ক্রমেই যক্ষা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাজীগঞ্জ ব্রাক যক্ষা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্তের চেয়েও বাড়ছে যক্ষা রোগীর সংখ্যা।
রোববার সকালে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোঃ মোশাররফ হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলায় করোনা পরীক্ষা করেছে ৬’শ ৫২ জন। তার মধ্যে ১৯০ জনের করোনা পজেটিভ। করোনায় মারা গেছে ১৭ জন। সুস্থ হয়েছে ১’শ ৫১ জন। বাকি ২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তথ্যমতে, হাজীগঞ্জ উপজেলায় গত ১৭ আগস্ট সর্বশেষ একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যক্ষা রোগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২’শ ২৯ জন। এই সংখ্যা এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংখ্যাটা বেশি ছিল। তারপর থেকে করোনার প্রভাবে যক্ষা রোগের পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। তাই রোগীর সংখ্যা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ ব্রাকের যক্ষা প্রতিরোধ শাখার সিনিয়র ম্যানেজার মনিমেশ বিশ্বাস।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত ছিল ৬’শ ৩ জন। মারা গেছে ৬ জন। ২০১৮ সালে যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল ৫’শ ৪০ জন। তবে আশার বাণী হচ্ছে, হাজীগঞ্জ উপজেলায় যক্ষা রোগে সুস্থ্যতার হার ৯৫ ভাগ। মৃত্যুর হার ৪.৫ ভাগ। বাকী দশমিক ৫ ভাগ অন্যান্য রোগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যক্ষা রোগ শনাক্ত করতে তিন ধরনের পরীক্ষা করা হয়। প্রথমত কফ পরীক্ষা, দ্বিতীয়ত এক্স-রে, তৃতীয়ত এক্সট্রা পলোমনারী নামে একটি পরীক্ষা। যক্ষা রোগী শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যক্ষা রোগের প্রধান শত্রু হলো ধূমপান। এই ধূমপানের কারণে যক্ষা রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যায়। এছাড়াও শরীরে রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। বাত জ্বর, হাড়ক্ষয় এসব যক্ষা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হয়ে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজন যক্ষা রোগের জীবাণু বহন করছে। আর ওই জীবাণুর নাম হলো মাইকো ব্যাকটেরিয়াম টিউবার কুলোসিস।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিবি, যক্ষা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, করোনার তুলনায় যক্ষা রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রাকের সাথে সমন্বয় করে যক্ষা রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়া হয়। নিয়মিত যক্ষা রোগীদের সাথে যোগাযোগ ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যক্ষা থেকে বাঁচতে হলে ধূমপান থেকে বিরত থাকাতে হবে। শ্বেত শ্বেতে জায়গায় থেকে বিরত থাকাতে হবে। তিনি বলছেন, এই রোগটির বেশিরভাগই ধনীদের তুলনায় গরিবের বেশি হয়ে থাকে। ভালো খাবার না খাওয়াও এ রোগের একটি অন্যতম অন্তরায়।