মরহুম আবদুল মান্নানকে নিয়ে বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান (৫৫) ঢাকায় একটি হসপিটালে ইন্তেকাল করেন।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। বুধবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুদিন আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা ধরা পড়ে। মরহুম আবদুল মান্নান হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ, উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তার মৃত্যুর পর হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।-
হাজীগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি মাহবুবুল আলম চুননু লিখেছেন- ‘সোনালী প্রজন্মের সোনার মানুষের প্রস্থান’
হাজীগঞ্জের শুদ্ধ ছাত্র রাজনীতির সোনালী প্রজন্মের সুসন্তান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাজীগঞ্জ শাখার সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, হাজীগঞ্জ শাখার ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আমাদের অতি স্নেহেরধন আবদুল মান্নান ঢাকা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।
লকডাউনের সময় তিনি হাজীগঞ্জ এসেছিলেন এবং আমাকে ফোন করেছিলেন দোয়া করার জন্য। আমি সাংবাদিক রুজমনকে সাথে নিয়ে ইফতারের পর উনার সাথে দেখা করতে যাই।
তিনি রাজনীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন।
প্রতিটা প্রশ্নের মধ্যেই বেদনা নিহিত ছিলো। তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে শ্রদ্ধা ও মান্য করতেন। আমি যথাসাধ্য তাঁর প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী হিসেবে চাঁদপুর কলেজের ছাত্র থাকাকালীন আমি গ্রেপ্তার হই এবং আর্মিদের দ্বারা নিগৃহীত হই ; সেই প্রসঙ্গও তিনি টেনে এনেছেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল রাশেদের প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন এবং আমাকে অনুরোধ করেছেন, কর্নেল রাশেদকে যদি কোনদিন দেশে এনে ফাঁসি দেয়া হয়, হাজীগঞ্জের মাটিতে যাতে তাকে কবর না দিতে পারে সেজন্য সাংস্কৃতিককর্মীদেরকে নিয়ে আমি যেন আন্দোলন গড়ে তুলি। তিনি আমাকে এও বলেছেন, এই আন্দোলনে আমি রান্ধুনীমুড়ার জামাল অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, হাজীগঞ্জ শাখার প্রচার সম্পাদক জামাল ভাইয়ের সহযোগিতা পাবো। আমি প্রিয় মান্নানকে কথা দিয়ছিলাম, এই বৃদ্ধ বয়সে জীবন দিবো, রাসেদকে এই মাটিতে কবর দিতে দেব না । তিনি নিজে আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকবেন বলে আমাকে এবং রুজমনকে সাহস দিয়েছিলেন।
হায়, আমাদের মান্নান নাই।
হৃদয় ভেঙে গেছে। রাজপথের লড়াকু সৈনিকের অকালে প্রস্থান মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
হে মহান আল্লাহ পাক আপনি আমাদের প্রিয় মান্নান ভাইকে পরোকালে শান্তিতে রাখুন এবং তাঁকে আপনার খাস রহমত দ্বারা বেহেশত নসীব করুন ।
তাঁর পরিবারের সবাইকে এই শোক বইবার শক্তি দান করুন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সত্য ব্রত ভদ্র মিঠুন লিখেছেন-
গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি শোক সংবাদ
হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জননেত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা ঘোষিত আন্দোলন সংগ্রাম ও সকল কর্মসূচীর সাহসী যোদ্ধা, অভিজ্ঞ সংগঠক, কারা নির্যাতিত অকুতোভয় মুজিব সৈনিক, সমাজকর্মী, আমাদের সকলের প্রিয় মোঃ আঃ মান্নান অদ্য বেলা অনুমান একটায় ঢাকা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার এই অকাল প্রয়ানে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ, সাহসী, ত্যাগী মুজিব সৈনিককে হারালো। তার এই অকাল প্রয়ানের ক্ষতি উপজেলা আওয়ামীলীগ মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করবে। আঃ মান্নান ছিল আমাদের সহযোদ্ধা, প্রিয় বন্ধু, তাকে কখনো ভোলা যাবে না। যতদিন বেঁচে থাকি সাংগঠনিক ও সামাজিক কাজে তার পদচারণা আমাদের মাঝে চির অম্লান হয়ে থাকবে। অনেকের সাথে আমাদেরকে রেখে মান্নানও অকালে চলে গেলো। পরম দয়ালু বিধাতার কাছে মান্নানের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। প্রার্থনা করি তার রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন,বন্ধু-বান্ধব সকলে যেন এই গভীর শোক সইতে পারেন। আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে অনেক শোকাহত। প্রয়াত মান্নানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুজ্জামান শামছু বলেন, আবদুল মান্নান ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো না। হাজীগঞ্জ উপজেলা রাজনীতিতে একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। ছাত্র রাজনীতিতে সবসময় নেতৃত্বের আসনে থেকে আমাদেরকে উৎসাহ আর সাহস জুগিয়েছেন তিনি। প্রয়াত আবদুল মান্নান ভাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রইল।
চাঁদপুর হাছান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শরীফুল হাছান লিখেছেন ‘কিছু কথা অম্লান স্মৃত’
হারালাম রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের শিক্ষকতুল্য ও সহযোগী এক বড় ভাইকে। হাজীগন্জ আওয়ামী লীগের দুর্দীনে দুর্গ শিরে যে ক’জন বিজয় কেতন উড়িয়েছিলো,মান্নান ভাই তাদের অন্যতম।নৌকার মনোনয়ন প্রাপ্তি, নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার দীর্ঘ দিনের সকল কুশিলবের বিজয়ের একসাথের এমন আলোকচিত্রে আর মান্নান ভাই থাকবে না। একজন ত্যাগী দলীয় মান্নান ভাইয়ের বিদায়ে আশংকা হয় চোর টোকাই পিস্তলী অশিক্ষিত হকার মাদকাসক্ত শাহেদ শামীমে দল ধ্বংস হওয়ার!
নির্বাচন এলেই নৌকা বিজয়ের কৌশল প্রদান আর প্রয়োগে তিনিই ছিলেন অগ্রণী, কত বিনিদ্র রাত কেটেছে একসাথে! এটাই হাজীগন্জ আলীগের জন্য আজীবন শূন্যতা।যা পূরনীয় নয়।তিনি পদ- অর্থ ক্ষমতা পাওয়ার জন্য নিজেকে বিকিয়ে দেননি। কোন নেতাকে বাবা ডাকেন নি।ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে কোনদিন মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন অপহরন করে ছাত্রলীগ যুবলীগ নামের মনস্টারকে হাতিয়ার বানান নি। পিস্তল পকেটে আর হাতে রেখে মানুষকে ভীত করে তিনি রাজনীতি করেন নি।কোন দিন নিজের নামে মিছিল কিরয়ে ব্যনার পেস্টুনে রাস্তা গাছ পথ দখল করেন নি। টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি তে নিজেকে অন্য দলীয়ের মতো নোংরা করেন নি।তিনি কোন দিন বলেন নি,আলীগ/ এমপি যতদিন আমার ক্ষমতা চলবে ততদিন। থানায় নিয়ে ক্ষমতার মোহে সাধারন দলীয়কে মারার লকাপের বাঁধার হুমকী দেননি।তার হাতে কোন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার বিপদগ্রস্থ হয়নি।যে সকল নেতারা সকলের জন্য মানবিক ছিলো,মান্নান ভাই সেই হাতে গোনা ২/৪ জনের অন্যতম।তার শুন্যতা যেন সুস্থধারার আওয়ামী রাজনীতির শূন্যতা আর রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নে গিলে খাওয়ার মহাযজ্ঞকারীদেরই উৎসব করা।
তাহার সাথে শেষ কথা—————–
একদিন রাত ১১ টার দিকে আমাকে ফোন করেই বল্ল,শরীফ ২ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে দে।আমি ছাত্রলীগ নেতা ছোট ভাই শাহজালাল রুবেলকে ফোন করে নম্বর দিয়ে বল্লাম মান্নান ভাইয়ের সাথে কথা বলো।একটু পরেই আমাকে আবার ফোন করে বল্ল,রুবেল নামক একটা ছেলে রক্ত দিবে আরো লাগলে ম্যনেজ করে ব্যবস্থা করবে।ধন্যবাদ তোকে।আর আজকে শুনলাম ওনার মৃত্যু সংবাদ।মৃত্যুই সত্য।আর বাকী সবার সব তামাসা আর মরিচিকা।মান্নান ভাই ছিলো হাজীগন্জের পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগের প্রতিশব্দ।তার মত কতক পরিচ্ছন্ন ত্যাগী মানবিক আওয়ামী লীগারদের সাথের আলোকচিত্রে থাকায় তাদের একজনকে হারানোর ব্যথায় আমিও মাওলার দরবারে ওনার জন্য উত্তম অবস্থার প্রার্থনা করছি।