মা হারা জমজ শিশু, বাবা চাকরী হারিয়ে দিশেহারা
মদিনা- মরিয়মকে রেখেই পরপারে মা, চাকুরি হারিয়ে বাবা দুগ্ধশিশুদের নিয়ে দিশেহারা। মদিনা-মরিয়ম দুই জমজবোন। গত ১৭ এপ্রিল ২০২০ জন্ম নেয়। জন্ম নেয়ার সাথে হারায় মা আরমিতা বেগমকে। জমজ দুই কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েই চলে যান পরপারে। আর চিরদিনের জন্য মা হারা হয় শিশু মদিনা – মরিয়ম। বাবা মুনছুর আলী শিশুদের সময় দিতে গিয়ে চাকুরীটাও হারান। এখন তিন মাসের মদিনা – মরিয়মকে নিয়ে দিয়ে দিশেহারা।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া ৫ হাজার টাকা শিশুর বাবার হাতে তুলে দেন।
শনিবার সকালে মদিনা আর মরিয়মের কষ্ট গাঁথা বিষয়টি সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। শনিবার বিকালে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গন্ধর্ব্যপুর (উ:) ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ফকির বাড়িতে গিয়ে তাদের সন্ধান মিলে। কথা হয় বাবা মুনছুর আলীর সাথে।
তিনি জানান, সে শাহরাস্তি উপজেলার শঙকর পুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর সে নানার বাড়ি হাজীগঞ্জের মোহাম্মদপুরে ছলে আসে। এখানে নানার ছোট ভিটাতে সরকারের দেয়া ঘরে মাকে নিয়ে বসবাস করে। তিনি বোনদের বিয়ে দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করত। ঢাকায় থাকার সুবাদে ঢাকায় বসবাসকারী রংপুরের লালমনির হাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় আরমিতা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে। সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। মা মানছুরা বেগম গ্রামে এঘর ও ঘর ঘুরে জীবন ছালায়। ছেলে চাকুরী করে মাকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা দিতো। এর মধ্যেই মুনছুর বাবা হবার পথে। স্ত্রী আরমিতাকে (১৭ এপ্রির ২০২০) হাসপাতালে ভর্তি করলে তার দুইটি জমজ কণ্যা সন্তান জন্ম দেয়। ওই দিন রাতেই মা মৃত্যুর কোলে ডুলে পড়েন।
দিশেহারা বাবা মুনছুন। ৬/৭ হাজার টাকার চাকুরী দিয়ে পেট -ই ছলেনা এর মধ্যে দুই কন্যা সন্তান। তার মধ্যে মায়ের দাফন, হাসপাতাল খরচ। কস্টে সব শেষ করলেও নিয়মিত চাকুরিতে যেতে পারেনি বলেই সে চাকুটাও গেল।
নিরুপায় বাবা মুনছুর মদিনা – মরিয়মকে নিয়ে ছলে আসে গ্রামে। নিজেই তাদের লালন পালন করছেন। একজনে ফুফু সুফিয়া অন্যজনকে খালা কারিমা মাঝে মাঝে দেখা শুনা করেন। আর কাঁদলেই কাঁদে নিয়ে ঘুরেন বাবা।
তিনি জানান, সপ্তাহে দুই হাজার টাকার দুধসহ প্রায় মাসে ১০ হাজার টাকাখরচ। একদিকে চাকুরী নাই। অন্য দিকে শিশুদের দুধ-ঔষধ।
তাই অবুঝ দুই শিশু কন্যা নিয়ে নিরবে নিবৃত্তে কাঁদে মুনছুর। শিশু দুটিকে বাঁচাতে সকলের এগিয়ে আসা সমীচিন বলে মনে করেন সচেতনরা।