নৌকাবাজার
হাজীগঞ্জ ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৮৫ সাল। স্টেশন রোড়ের কবির মন্জিলে আমাদের বাসা। রাস্তার একপাশে আমাদের বাসা। অপর পাশে গাজীর খাদা। ডাকাতিয়া নদীটি পোস্টঅফিসের পাশ ঘেষে নৌকা করে তিনটি ব্রীজ পার হতো। একটি পোস্টঅফিস ব্রীজ, আমিন রোড়ের ব্রীজ ও স্টেশন রোডের ব্রীজ। নৌকা এসে আমাদের বাসার উল্টোপাশে সারিবদ্ধ থাকত। নৌকাগুলো একের উপরে আরেকটি করে কমপক্ষে ৫ টি নৌকা একসাথে থাকত। বর্ষার সময় পানির ঢেউ মনেও নাড়া দিত। হিন্দুধর্মীয় আঁখড়ায় যাবার জন্য একটি ব্রীজ ছিল। স্টেশন রোড়ের পাশ ঘেষে খালটি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলে গেছে। নানুর বাড়ী থেকে নৌকা করে আমার বাসার সামনে নামতাম। খালের অপর পাশে মুচি বাড়ী।
হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে নামাজের একামাত হলে আমার বাসায় শুনা যেত। সন্ধ্যার পর আঁখড়ায় হিন্দুধর্মের উপাসনা শুনা যেত। রাতে এশার নামাজের সময় শুনা যেত না। এটা হলো ধর্মীয় সম্মানবোধ । স্টেশন রোডে একটি মুদি দোকান , তা হলো আনোয়ার মুদি দোকান। সন্ধ্যার পর পুরো রাস্তায় তেমন ল্যাম্প ছিল না। ব্রীজ থেকে রিক্সা নামতে সমস্যা না হয় সেজন্য বাসার সামনে একটি লাইট দিয়ে দেয়া হয়।
এগুলো স্বপ্ন। এখন তা সোনালী অতীত হতে গেছে। পোস্ট অফিসের পর আর ডাকাতিয়া নদী নাই। এই চারটি ব্রীজের অস্তিত্ব মুছে গেছে। ডাকাতিয়া নদীর এ অংশের উপর বড় বড় বহুতল দালান স্থাপন করা হয়েছে। বড় মসজিদ, মাদ্রাসা , আঁখড়া তাদের মত করে বিভিন্ন মার্কেট করা হয়েছে । জেলা পরিষদ তাদের মার্কেট এর ভিত্তিপ্রস্তর। সেখানে আগে ছিল খেলার মাঠ। এখন আর খেলার মাঠও নেই। খেলার মাঠগুলোর দখল হবার কারণে যুবকরা চলে গেছে নেশার জগতে।
আমি একটি বিষয় বোধগম্য না। যে এই এতবড় নদী বা খাল কি করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভবণ নির্মাণ করে। আজ এই নদী বা খালের জন্য ভবনগুলোর থেকে নির্গত পানির জন্য ড্রেন করা হয়। সেই ড্রেনও এখন বিভিন্ন ময়লা বা আবর্জনা দিতে পরিপূর্ন। জলাশয়গুলো কোন মহলের নিকট আত্মসমর্পন করেছে? এরা কেউ নয়, এরা এই এলাকার প্রভাবশালী মানুষ। । এরাই রাজনীতিতে নষ্টামির সূচনা করেন। এই প্রভাবশালী মহলের কুমির হয়ে ডাঙ্গায় অবস্থান করছে। এই কুমিরেরা জলাশয়, খাল ও ডাকাতিয়া নদী দখল করে বড় বড় দালান তৈরি করেছে।
সম্প্রতি স্টেশন রোডের ১০০ গজের মধ্যে দেখলাম ১৭ জন ডাক্তার বসে। বিশেষজ্ঞ থেকে হাতুড়ির সব ডাক্তার। সবাই আছে। এক সময় ডা. অরুন চন্দ্র দেবনাথ ছাড়া কেউ ছিলেন না। এখন ডেলিভারি থেকে বড় বড় ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করা হয়। যে লোকটি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করেন উনি মারা গেলেন লিভার ক্যান্সারে। কিছু কিছু হাকিম বা ইউনানী চিকিৎসক ৫ মাসে বিনা সিজারে ডেলিবারির ঔষধ বিক্রয় করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন । অথচ তার ঘরে তিনটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে গাইনী বিশেষজ্ঞের সিজারে। নিজেরটা করলেন সিজারে আর গ্রামের গরীব ও অসহায় মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন। যারা বন্ধ্যাত্ব রোগের চিকিৎসকের বাচ্চা হয় না। তারা ঢাকায় দিতে জরায়ু ও হার্নিয়া অপারেশন করেন। এই সকল হাকিমদের মনিটরিং করার লোক কি নেই? তারা সেক্স এর ঔষধ বিক্রি করে যুবসমাজের সবটুকুই নষ্ট করে দিচ্ছে। আমি দেখি সবাই নামে পাশে ডাক্তার লিখে । এত বড় সাহস বড় কথা নয়, সবচেয়ে বড় বিষয় তারা গ্রামের অসহায় মানুষদের সাথে প্রতারণা করছেন। যাক এটা দেখার জন্য ভোক্তা অধিকার ও স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয় আছে।
নৌকাবাজারটি আজ কিসে রূপান্তরিত হলো। নদীর গতিপথ পরিবর্তন দূরে থাক। নদীই ভরাট হয়ে গেছে। আজ হয়ত কোন প্রভাবশালী মহলের গাত্রদাহ হতে পারে, তাই আমি লিখতে হবে ।
“ লেখাটি সম্পূর্ন কাল্পনিক ।”