সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদুল আযহা পালিত
মুসলমানদের ত্যাগের মহিমা ও বার্তায় উদ্ভাসিত হয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা, যার আরেক নাম ‘কোরবানি ঈদ।’ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদসহ জেলার সর্বত্রে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করা হয়।
‘কোরবানি’ শব্দটি আরবি ‘কুরবুন’ শব্দ থেকে আগত এবং ফার্সি, উর্দু ও বাংলায় বহুল ব্যবহৃত। আরবি পরিভাষায় কোরবানিকে ‘নুসুক’ও বলা হয়। শাব্দিকভাবে যার অর্থ হলো- নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য লাভ করা। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে নিজের আত্মত্যাগের মাঝেই নিহিত আছে কোরবানির মূল তাৎপর্য।
ফলে পশু জবেহ করে যে কোরবানি ঈদ উৎসব পালন করা হয়, তার মর্মার্থ অনেক গভীরে। কেবল পশু জবাই করলেই স্রষ্টার প্রতি প্রেমময় ত্যাগ প্রকাশিত হয় না, নৈকট্য লাভও সম্ভব হয় না। জাগতিক লোভ, লালসা, অহংবোধ, হিংসাতে অন্ধ থাকলে আত্মত্যাগ অসম্ভব। অসম্ভব স্রষ্টার নৈকট্য লাভ। পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে নিজের রিপুকে নিধন করাও কোরবানির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
পাপ ও পূণ্যের দোলাচলে প্রবহমান মানুষের জীবনে শয়তান ও রিপু বা নফসের প্ররোচণাকে পরাজিত করে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় অপকর্মকে হনন করাও এক মহত্তম কোরবানি। তাওবার মাধ্যমে পাপ থেকে পরিশুদ্ধি অর্জন করে একমাত্র স্রষ্টার জন্য যাবতীয় ত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুভ্রতায়, পবিত্রতায়, নিষ্ঠায়, আনুগত্যে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করাই কোরবানির মূল লক্ষ্য। কেননা, পবিত্র কোরআনের সূরা হজের ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পশুগুলোর গোশত কিংবা রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের মনের তাকওয়া (খোদাভীতি)।’
প্রকৃতপক্ষে তা ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য আত্মউৎসর্গের এক পরীক্ষা। একই সঙ্গে মানুষের জন্য কোরবানির শিক্ষা। পবিত্র কোরআনে সূরা সাফফাতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল। আমি তার বদলে এক বিরাট জবেহ করার জন্তু দান করলাম। তারপর যারা আসবে তাদের জন্য এ কথাটি কায়েম রাখলাম।’
কোরবানি মানে কেবল পশু জবাই নয়। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে তার নৈকট্য লাভের জন্য পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত ইবাদত। তাই মানুষের কু-রিপু অর্থাৎ আমিত্ব, অহংকার, দাম্ভকিতা, পশুত্ব, ক্ষুদ্রতা নিচুতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, লোভ, লালসা ও পরশ্রীকাতরতা ত্যাগের মাঝেই নিহিত আছে কোরবানির মূল নির্যাস।
কোরবানি আমাদেরকে যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত করে পরিশুদ্ধির পথে উজ্জীবিত করবে এবং আল্লাহর জন্যে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে তার নৈকট্য লাভে ধন্য করবে এবং আমাদেরকে শয়তান ও নফস বা রিপুর প্ররোচনা থেকে মুক্ত হয়ে ইহ ও পরকালীন কল্যাণের পথে প্রণোদিত করবে, এটাই প্রত্যাশিত। ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’, আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের ইবাদত-বন্দেগি কবুল করুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।