সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে খোলা চিঠি
‘এই স্বাধীনতা আমার কাছে সেদিনই প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে , যে দিন বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে’-বঙ্গবন্ধু
বাবা তোমার জন্য অনেক অনেক আর্শীবাদ।
তুমি সম্মোধনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবো বিধায় তুমি সম্মোধন করলাম। নানা – নানির মতো বড় হৃদয় এবং মা – বাবার মতো জ্ঞানী, বাঙালীর আগামীর স্বপ্ন পূরণের কান্ডারী আমাদের প্রিয় ” জয়ও ” ” তুমি “সম্মোধনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন, এমন প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করছি।
বাবা, মানুষ জন্মগত ভাবে রাজনৈতিক জীব। তোমার জন্য এ সত্য আরও কঠিন। বাঙালী জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বর্বর পাকিস্তানীদের জেলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোল আলো করে, এককালের তুখোড় ছাত্র নেতা বরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী শ্রদ্ধেয় এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্যারের ঔরসে, আরেক তুখোড় ছাত্র নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনার গর্ভে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই তুমি জন্ম লাভ করো। তোমার নানা আমাদের জাতির পিতা তখন শত্রুদেশ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিষ্ঠুর নির্যাতনে অন্তরীণ। স্বাধীনতা উত্তর কালে তোমার ” জয় ” নামটি রেখেছেন পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ।
সুতরাং এই জাতির প্রতি তোমার দায় – দায়িত্ব এবং কর্তব্য অসীম ।
তুমি বর্ণিল রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং পিতৃভূমি রংপুর আওয়ামী লীগের সদস্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্য মন্ত্রণাদাতা।
আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী হচ্ছে বাবা ?
ক. হাজার বছরের শাসন – শোষণ – নির্যাতন – নিপীড়ন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে দেশটির সৃষ্টি , সে দেশটি আজ মুষ্টিমেয় চোর – ডাকাত – লুটেরা – দুর্বৃত্ত সুবিধাবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়া দেশটিকে আজ ২২ হাজার পরিবার লুটেপুটে খাচ্ছে ? আমার সহযোদ্ধাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এ দেশে তারেক, মামুন, সম্রাট, শামীম, সায়েদ, আরিফ, পাপুল, পাপিয়া, সাবরিনা, শারমিনদের মতো নাম না জানা লুটেরারা রাম রাজ্যত্ব চালিয়ে যাচ্ছে ?
ওরা বাঙলার সম্পদ ইঁদুরের মতো কেটেকুটেই শুধু খাচ্ছে না , মাটির তলায়ও ( বিদেশে পাচার করছে) লুকোচ্ছে !
এই রক্তকেনা দেশটির জন্য এই চোর ডাকাত – বাটপারগুলোর কী কোন অবদান আছে বাবা ?
খ . ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে আমি তোমার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই বাঙলার যাহা কিছু সত্য, সুন্দর, ন্যায়, কল্যাণকর সবই তো ছাত্র রাজনীতির ফসল। তোমার নানা টঙ্গীপাড়ার খোকা শুদ্ধ ছাত্র রাজনীতির পথ বেয়েই তো আজ বাঙালী জাতির মহান পিতা ।
সেই গৌরবময় ছাত্র রাজনীতি আজ অছাত্র – অশিক্ষিত, নিপীড়নকারী মাস্তানদের হাতে বন্দী। জেলা উপজেলা কমিটিগুলোতে স্কুল পার হয়নি এমন বয়স্ক বিবাহিত চৌদ্দ আবুদের ( বাচ্চা) বাপদের দ্বারা পরিচালিত। অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের অফিস নাই কিন্তু লুটেরা মাস্তান তথাকথিত ছাত্র নেতারা জৌলুসময় অফিস হাঁকিয়ে বসে থাকে। টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ বেচাকেনা করে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওরা যায় না কিম্বা যোগ্যতার অভাবে যেতে ভয় পায়। প্রকৃত উচ্চ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্ররা এমনকি প্রবীণ ত্যাগী পর্যন্ত ওদের ভয়ে তটস্থ থাকে।
” ছাত্র রাজনীতি শুদ্ধ রাজনীতি শিক্ষার পীঠস্থান ” —– গৌরবময় ছাত্র রাজনীতিকে পূর্বের ঔজ্জ্বল্যে ফিরিয়ে আনতে তুমি মনোযোগী হবে বাবা।
গ . Money is no problem. l will make politics difficult for politicians.
অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসকদের এই দম্ভোক্তি বাঙলার চিরায়ত রাজনীতির সংস্কৃতি তথা ধারাকে যে ভাবে পরিবর্তন করে সুবিধাবাদী রাজনীতির প্রবর্তন করেছে , সেই অশুভ ধারা ভেঙে বাঙলার আবহমান ত্যাগী কল্যাণকর রাজনীতির ধারা চালু করতে হবে। আর এ কাজটি তোমাকে দিয়েই সম্ভব। বাঙলার গণমানুষ এই বিশ্বাস লালন করে সর্বতোভাবে।
ঘ . মৌলবাদ – জঙ্গীবাদ – ধর্মব্যবসা বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এদের সাথে একটি আপোষ চলছে। নোংরা – নারীবিদ্বেষী – বিজ্ঞানবিরোধী তেঁতুল হুজুরদের আস্কারা দিয়ে দেশটিকে পাকিস্তান বানানোর একটি সূক্ষ্ম পায়তারা চলছে। লাখো শহীদের রক্তে লিখা ৭২ – র সংবিধান প্রবর্তন করে চির চেনা ” আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম ” র বাংলাদেশ গড়ায় তুমি অবদান রাখবে। বঙ্গবন্ধুর মতো তোমার নাম চির স্মরণীয় থাকবে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর রক্তঝরা ইতিহাসে ।
ঙ . বাংলাদেশে এখন আর ভাত কাপড়ের অভাব নাই। কিন্তু অন্য মৌলিক অধিকারগুলো বিশেষ করে শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেহাল অবস্থা চলছে। শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার ——- এ ধারণা এখন মৃত। এখন আমলার ( ধনাঢ্য) সন্তান আমলা, কামলার সন্তান হচ্ছে কামলা।
করোনায় চিকিৎসার বেহাল অবস্থার চিত্র যে ভাবে চিত্রিত হয়েছে —– তা লজ্জাস্কর। চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ধনী – দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। গরিব মরণব্যাধি নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে , ধনীরা সামান্য হাঁচি কাশি হলে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে তুমি পরিত্রাণ দিবে বাবা ।
এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ধনী ঘরের সন্তানদের অংশ গ্রহণ ছিল খুবই কম। দরিদ্র, ভূখা – নাঙ্গা, কৃষক – শ্রমিক, মেহনতী, বঞ্চিত শ্রেণীর সন্তানরাই বহুলাংশে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।
তাই তো যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বজ্রকণ্ঠে বলতেন ,
” এই স্বাধীনতা আমার কাছে সেদিনই
প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে ,
যে দিন বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক,
মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের
অবসান হবে ”
তুমি বাঙলার আগামী দিনের আশার প্রদীপ। ” সজীব ওয়াজেদ জয় ” দেউটির আলোয় বাঙলার সকল আঁধার দূর হবে। মুজিবীয় আদর্শে বাংলার রাজনীতিতে শুদ্ধতা ফিরে আসবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তুমি নিজেকে নিয়োজিত রাখবে —– আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার বাগানে ফুল ফোটবে — সেই ফুলের সৌরভে সুবাসিত হবে বাঙলা।
বাবা তোমার ৫০ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তুমি সুখী ও দীর্ঘজীবী হও।
লেখক- সভাপতি, হাজীগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ।