হাজীগঞ্জে জাল বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি মৎস্য চাষীরা
হাজীগঞ্জ উপজেলায় সুতা জাল ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে মাছ চাষীরা। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন পুকুরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে করে মাছ প্রকল্পের বেড়িবাধ গুলোতে দ্রুত জাল দিতে হচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাল সুতার দাম দ্বিগুণ করেছে জাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামছুল আলম পাটওয়ারী। তিনি বলেন, কোনো ভাবেই যেন সুতার জালের দাম বৃদ্ধি না করা হয়। সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কোন অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ বাজারের বণিক পট্টিতে হঠাৎ করে সুতা জালের দাম বৃদ্ধি করেছে। একই সুতা জালের দাম দেখা গেছে, কয়দিন আগে রেখেছে ১৮৬০ টাকা, পরে সেই সুতার দাম রেখেছে ২৩৬০ টাকা। এভাবে সুতা জালের দাম দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরা পড়েছে বিপাকে।
সরেজমিনে হাজীগঞ্জ বাজারের বণিক পট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, মৎস্য চাষীদের জন্য ব্যবহার করা হয়, সেই জাল সংকট এবং দাম দ্বিগুণ।
জানতে চাইলে সুতা জাল বিক্রেতা প্রদীপ ষ্টোরে শিমুল নামের এক কর্মচারী বলেন, আমাদের দোকানে সুতার দাম বাড়েনি। আমাদের সুতা বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্য ব্যবসায়ীরা সুতার দাম বাড়িয়েছে। এবং তার কাছে জানতে চাইলে আরও বলেন হাজীগঞ্জে যেভাবে সুতার দাম বেড়েছে। ঢাকাতেও দাম বেড়েছে। সেটা শুধু হাজীগঞ্জ নয়। সারাদেশেই হঠাৎ করে দাম বেড়েছে। তাদের কাছে কোনো মালামাল নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
সে আরো জানায়, পুকুর পাড়ে ব্যবহারের জাল সংকট । তাই ১১শ টাকার জাল এখন ১৬শ/১৮শ বিক্রি হয়। আবার কেউ ১৪শ টাকায় বিক্রি করছে। আমার কাছে নাই।
অথচ পরের দিনে দেখা গেছে, মৎস্য চাষীদের ব্যবহৃত জাল হাজীগঞ্জ বাজারে বিপুল পরিমাণ ঢুকছে। সেই সময় প্রতিবেদক জিজ্ঞাসা করতেই সেই বিপুল পরিমাণ জাল গুলো কার দোকানে যাবে? বহনকারীরা বলেন, ‘জালগুলো প্রদীপ ষ্টোরে যাবে।’
একই বিষয়ে কথা হয় মেসার্স মনোরঞ্জনের দোকানের সঞ্চয় দেবনাথ এর সাথে। তিনি জানান, শুধু শিমুল দাম বাড়ায়নি, আমাদের সকল দোকানে দাম বেড়েছে। কারণ ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। তাই আমরা হঠাৎ করে জালের পরিমাণ কম থাকায় বিপাকে পড়েছি। বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সেই জালগুলো দাম বেড়েছে।
এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ করে বৃষ্টি হয়। তাদের বিপুল পরিমাণ মাছ চলে গেছে। তারা বাজারে এসে পড়েন বিপাকে। সুতা জালের দাম বেড়ে গেছে সামর্থের চেয়ে বেশি।
এই বিষয়ে কথা হয় উপজেলার গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ শাহাদাত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এক রাতে প্রায় নয় লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তারপর দিন হাজীগঞ্জ বাজারে সুতা জাল বেশি দামে নিয়েছে। জাল বিক্রেতারা একটি সিন্ডিকেট হঠাৎ করেই হাজীগঞ্জ বাজারে দাম বৃদ্ধি করেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।
জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামছুল আলম পাটওয়ারী বলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় আট হাজার পুকুরে মাছ চাষ হয়। টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ চলছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দাম বৃদ্ধি করায় সতক করা হয়েছে। এছাড়াও কারেন্ট জাল বিক্রি করায় এক দোকানীর কাছ থেকে ১০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।