হাজীগঞ্জে ‘ভুয়া সার্টিফিকেট’ দিয়ে অনেকেই হতে চাচ্ছেন সপ্রাবির সভাপতি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে স্নাতক পাস ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হতে পারবেনা বলে বিজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেই আলোকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় গত ছয় মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে টানাহেঁচড়া। সভাপতির পদ নিয়ে চলছে কানাঘুষা। সম্প্রতি হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্থানীয় সাংসদের মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য সভাপতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা দিয়ে জমা দেয়া শুরু করেছে। ১৫৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া শুরু করেছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮১ নং বেলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৪২ নং বেলঘর দক্ষিণ-পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দিয়েছেন। সেখানে ৮১ নং বেলঘর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে সোহরাব হোসেন মিয়াজীকে ও বেলঘর ১৪২নং বেলঘর দক্ষিণ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে আবু ইউসুফ রাজু পাটোয়ারী দেখানো হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসে খবর নিয়ে জানা গেছে, রোববার এই দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাগজপত্র জমা পড়েছে। সেখানে ৮১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে সৌরভ হোসেন মিয়াজি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস এবং দক্ষিণ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবু ইউছুফ রাজু প্রধানীয়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সিভিল শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আর ওইসব কাগজপত্র সত্যায়িত করেছেন, যারা তাদের নিয়েও সন্দেহের দানা বেঁধেছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, আবু ইউছুফ রাজু পাটওয়ারী পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেছেন কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। অন্যদিকে সোহরাব হোসেন মিয়াজী কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। অথচ দুজনের শিক্ষা সনদ সত্যায়িত কপি জমা দিয়েছেন। এভাবেই হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দিয়েছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
সোমবার শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতি নিয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন বেলঘর গ্রামের বাসিন্দা সগীর আহম্মেদ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, আবু ইউছুফ রাজু পাটওয়ারী সভাপতি হতে তার মেয়েকে বণর্মালা একাডেমি থেকে বেলঘর দক্ষিণ-পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবছর ভর্তি করান। এবিষয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলঘর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া বলেন, রোববার পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সেখানে সোহরাব হোসেন মিয়াজী শিক্ষা সনদের সত্যায়িত কপি দিয়েছেন। আমি সেভাবেই জমা দিয়েছি। বাকিটা অফিশিয়াল ভাবে দেখবে। অন্যদিকে
বেলঘর দক্ষিণ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালমা আক্তার বলেন, যেভাবে কাগজপত্র পেয়েছি, সেভাবে আমি জমা দিয়েছি। বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা হচ্ছে। এই তালিকা উপজেলা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে উপস্থাপিত হওয়ার পর যাদের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির ভুয়া প্রমাণিত হবে
বা সন্দেহ হবে তাদেরকে বাতিল করা হবে।
তিনি আরো বলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলায় স্নাতক ডিগ্রিধারী ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনের বাইরে আমরা যেতে চাই না।