শিক্ষালয় ও স্মৃতিকথন (১ম পর্ব)
১৯৮৬ – ৮৭ সালের দিকে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে মাধ্যমিকে উন্নতি করার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন সময় ডাঃ আবদুর রশিদ তপদার সহ আরো অনেকে। তিনি ১৯৮৫ সালে রেলওয়ে অডিটর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি পেনশনের ২৬ হাজার টাকা তৎকালীন স্কুলের সভাপতি আবিদ আলী ভুঁইয়ার হাতে তুলে দেন। অর্থ দিয়েই তিনি বসে থাকেননি এলাকার দায়িত্বশীল সবাইকে নিয়ে ছাত্র /ছাত্রী সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েন। ফলে ছাত্র /ছাত্রীর উপস্থিতি বেড়ে যায়। সেই সময়ের আমিন মেমোরিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক পরবর্তীতে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ রাজ্জাক সাহেব প্যারাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন ইংরেজি ক্লাস নিতেন।
শিক্ষা জীবনের স্মৃতিকথনে মনে পড়ে নোয়াপাড়ার আবুল বাশার ভুঁইয়া, ইসমাইল হোসেন স্বপন, সফিকুল ইসলাম, আঃ হালিম এবং আঃ কাইয়ুম তপদারসহ আমরা অনেকে স্কুলের অর্থ যোগানের স্বার্থে সেই সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাঁশ, রেন্ডি কড়ই, কাফিলা গাছ সংগ্রহ করা কাজ। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আবু তাহের, এসব ২২০০০ টাকা বিক্রি করা টাকাটা হাতিয়ে নেন। যা ছিল অত্যান্ত দুঃখজনক!
পরবর্তী সময়ে টাকাটা উদ্ধারে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আঃ কালাম মজুমদার, হাজী বাড়ীর প্রয়াত কামাল, মধ্যের বাড়ীর কাশেম সহ ৭/৮ জন চাঁদপুরে ঐ শিক্ষকের বাসায় হানা দেয়। উনাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাহের মাষ্টার পালিয়ে যায়।
তখনকার সময়ে প্যারাপুর সরকারী পুকুরের মাছ বিক্রি করা টাকা ডাঃ রশিদ তপদার এবং আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাহেবরা একটা অংশ ঈদগাহর ফান্ডে আর একটা অংশ স্কুল ফান্ডে দিয়ে দেন। উল্লেখ্য যে, পুকুরের মাছ বিক্রির টাকা সবসময় নিয়ে নিতো ঈদগাহর উন্নয়নে। যদিও পুকুরটি ঈদগাহর ছিল না। তৎকালে প্যারাপুরে একটি মাদ্রাসা ছিল, কিন্তু মাদ্রাসার নিজস্ব কোন সম্পত্তি ছিল না। মাদ্রাসাটি ছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে জরাজীর্ণ ঘরটি পুনরায় মেরামত করে স্কুলের ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সেই ঘরে আমিও পড়ালেখা করেছিলাম। প্রাণের বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক করতে অর্থের প্রয়োজনে মাছ বিক্রির কিছু টাকা স্কুল ফান্ডে নেওয়ায় তখনকার সময় গুটি কয়েকজন স্কুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা এলাকায় একটা অপপ্রচার করে ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষকে উসকিয়ে দেয়। যার পরিণতিতে ১৯৮৭ সালে রমজানের ঈদের দিন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। ঐ ঘটনায় আঃ রশিদ তপদার, হাবিব উল্লাহ তপদার, ওমর ফারুক, আঃ কাইয়ুম, আঃ আউয়াল, হাজী বাড়ির কামাল, আবু তাহের, আবুল কালাম মজুমদার, বর্তমান তফসিলদার সেলিম সহ আরো অনেকে আহত হয়। যাদের ভিতরে অনেককে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এদের মধ্যে ডাঃ আঃ রশিদ তপদার এবং হাবিব উল্লাহ তপদার বেঁচে নেই।
হামলার উদ্দেশ্য ছিলো এ বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া। কিন্তু হয়েছে কি তাই? পরবর্তীতে হাজি হেলাল উদ্দিন মিয়াজি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনিসহ সকলের আন্তরিক চেষ্টায় ২০০২ সালে মাধ্যমিক হিসাবে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। এ স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে প্রাণের বিদ্যালয় আজ সহ-মহিমায় আলোকিত ।
এ প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করেছেন/ করে যাচ্ছেন তাদের সকলের জন্য দোয়া ও ভালবাসা অবিরাম। প্রাণের বিদ্যালয়ের অগ্রগতির সাথে জড়িত যারা দুনিয়ার জমিন থেকে বিদায় নিয়েছে তাদের সকলকে আল্লাহ জান্নাতের উচ্চ মকাম দান করুক। আর এখনও যারা জীবিত আছে এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ নেক হায়াত দান করুক, আমিন।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল পাটওয়ারী
প্রাক্তন ছাত্র, প্যারাপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
(দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, পপুলার বিডিনিউজ লাইক পেইজ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।)