ফকিরাপুলে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা ও অন্তরালের খবর
ডিক্লারেশন প্রাপ্ত যে সমস্ত দৈনিক মাসে মাত্র ৩ দিন কিংবা ৪ দিন প্রকাশিত হয়। আর যে সমস্ত সাপ্তাহিক বছরে ৭ বার কিংবা ৮ বার প্রকাশিত হয়, এই সমস্ত অনিয়মিত পত্রিকাই হলো আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনা প্রধানের পর যদি কোন ক্ষমতাবান কেউ থাকেন, তিনি হলেন আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, একুশে টিভির প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও এত প্রতিপত্তি নিয়ে চলেন না, যে প্রতাপে অধিকাংশ আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার মালিক কাম সম্পাদকরা চলাফেরা করেন। এদের রয়েছে অভিজাত এলাকায় প্লট এবং ফ্ল্যাট। পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি। এদের প্রধান পেশা হলো তদবির। এরা সচিবালয়, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, মিরপুর ও উত্তরায় সবচেয়ে বেশি চলাচল করেন। আর মফস্বল এলাকাগুলোতে তো একেকজন সংসদ সদস্যের পাওয়ার নিয়ে দাবড়িয়ে চলে।
ফকিরাপুল হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান আন্ডারগ্রাউন্ড সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা শিল্পাঞ্চল। ফকিরাপুলেই আন্ডারগ্রাউন্ড সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা শিল্প বিকশিত হয়েছে এবং অবিরতভাবে এখনও হচ্ছে। ১২ ফুট x ১২ ফুট অর্থাৎ ১৪৪ বর্গফুটের একটি রুমে ২০টি দৈনিক পত্রিকার অফিস একমাত্র বাংলাদেশের রাজধানী ফকিরাপুলেই সম্ভব। এই অফিসগুলো সবই আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার অফিস। অবশ্য ফকিরাপুলের আশেপাশের এলাকাতেও বেশ কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার অফিস আছে।
এই পত্রিকাগুলোর প্রধান আয়ের খাতগুলো হলোঃ
১. তদবির বাণিজ্য
২. ব্ল্যাকমেইল
৩. চাঁদাবাজি
৪. রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী নেতাদের চাটুকারিতা ও তেলবাজি
৫. পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে দালালি
৬. ডি.এফ.পি করা থাকলে সরকারি বিজ্ঞাপন
৭. প্রচার সংখ্যা বেশি দেখিয়ে সরকারি কাগজ বিক্রয় অর্থাৎ প্রকাশিত হয় ২০০ কপি কিন্তু প্রচার সংখ্যা দেখানো হয় ৪০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ কপি।
৮. ধান্ধাবাজি
এই সমস্ত পত্রিকা ছাপানোর জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা অন্য পত্রিকার সংবাদ কপি পেস্ট করে ফরম্যাট সাজিয়ে রাখে, আপনি অর্ডার দিলে আপনার পত্রিকার নাম দিয়ে ছাপিয়ে দিবে।
এদের রিপোর্টারা গলায় মোটা ফিতা দিয়ে “সাংবাদিক” লেখা আই.ডি কার্ড ঝুলিয়ে রাখেন। মটর সাইকেলে “প্রেস বা সাংবাদিক” লেখা অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। গাড়ির “ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড” সুন্দর করে কভার দিয়ে ঢাকা থাকে সবসময়, যা কখনোই নামানো হয় না। গাড়ির পিছনের ড্যাশবোর্ডে এমনভাবে নিজ পত্রিকার কয়েকটি কপি রাখেন যেন বাহির থেকে সহজেই দেখা যায়, পত্রিকার পাশেই রাখেন ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেত্রীর ছবি সংবলিত সুভ্যেনির।
আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো প্রকাশের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পত্রিকার নাম ও কোন ধরনের সংবাদ যাবে বলে দিলেই তারা চাহিদা মাফিক সংবাদপত্র ছাপিয়ে দেয়। তারাই বিভিন্ন পত্রিকা হতে সংবাদ কপি পেস্ট করে নিজেদের মতো সাজিয়ে রাখে। তবে ধান্ধা সংক্রান্ত রিপোর্টগুলো লেখার জন্য আলাদা পারিশ্রমিক দিতে হয়। সব খরচসহ ২০০ কপি পত্রিকা ছেপে দিবে ফর্মাভেদে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকায় মাত্র।
ভেবে দেখুন!!! পৃথিবীর আর কোথাও পত্রিকার এমন মারমার কাটকাট বাণিজ্য নেই। এই ফকিরাপুলের আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলাের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়ছে।