দ্বিতীয় রিপোর্টের অপেক্ষায় সাংবাদিক সিফাত
করোনায় আক্রান্ত সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সিফাত। ২০ দিন যাবত পুরো পরিবার নিয়ে লকডাউনে আছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে যোগাযোগ করে জানা গেছে বুধবার তিনি দ্বিতীয় বারের মতো নমুনা দিয়েছেন। শারিরিকভাবে তিনি কিছুটা সুস্থ অনুভব করছেন।
বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ইব্রাহীম খান রনি খাদ্যদ্রব্য ও ফল সামগ্রী প্রেরণ করেন। তার পক্ষে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান বাবলু, মনজুর আলম, মজিবুর রহমান আলীগঞ্জ গিয়ে সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সিফাত এর বাসায় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সিফাত কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করে সবার দোয়া চেয়েছেন।
করোনা আক্রান্ত হবার ২০ তম দিনে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তা-হুবহু তুলে ধরা হলো-
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের আজ ২০ তম দিন। একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাহিরেও সমাজের নানাবিধ কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছি। নিজের সাধ্যমত চেস্টা করেছি করোনাময় দুঃসময় মানুষের পাশে থাকতে। তথ্য, পরামর্শ ও খাদ্যশস্য নিয়ে অসহায় ও মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। ছিলাম করোনা সচেতনতায় ও লাশ দাফনে কিছু সময়ের সহযোগী হয়ে। যদিও এটির সংখ্যা গুটিকয়েক। তারপরও নিজ ও নিজের পরিবার, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থনৈতিক সহযোগীতায় চেস্টা করেছি তাদের পাশে থাকতে। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট প্রকাশের সাথে অজস্র মানুষ তাদের নিজ নিজ ফেসবুক থেকে রোগ মুক্তি কামনা করে দিয়েছেন পোষ্ট। আর মনোবল চাঙা রাখার জন্য ডাক্তার, আত্মীয়জন, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, গুরুজন, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছোট ভাই ও সদস্য, বোন এবং জনপ্রতিনিধিরা ফোনে, ফেসবুক মেসেঞ্জারে যুগিয়েছেন সাহস। যা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। আমি তাদের সকলের প্রতি কৃৃতজ্ঞ। যদিও আমি সমাজের জন্য এমন কিছু করতে পারেনি এখনো। কিন্তু যে ভালোবাসা আপনারা দেখিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ্ তার উছিলায় মানবকুলের সেবার জন্য আমি আমার নিজেকে উৎসর্গ করলাম।
পজেটিভের খবর শুনে অনেক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ছোট ভাইয়েরা আবেগ ধরে রাখতে না পেরে চলে এসেছেন আমার বাসায়। প্রাণের বন্ধু ও প্রিয় চাঁদপুরের সারথি ছোট ভাইগুলো কেঁদেছে বাচ্চা শিশুর মত! আবার নিয়ে এসেছে কবুতর, দেশীয় মুরগিরডিম, ফল, নিত্যপণ্য। যা নিষেধ করা সত্ত্বেও নিয়ে এসেছেন। জেলার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কয়েকদিন পর পর পাঠাতেন নানা রকমের ফল। কষ্ট পাবে বলে ফিরিয়ে না দিয়ে গ্রহণ করেছি। কারণ এগুলো ছিলো “ভালোবাসার উপহার”। আবার যখন শুনলাম অনেক বন্ধু তাদের স্ব-পরিবার আমার সুস্থতার জন্য রোযা রেখেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছেন তখন নিজেকে ধরে রাখতে কষ্ট হয়েছে। আমার সুস্থতার জন্য রোযা রেখেছে কয়েকজন ছোট ভাই ও তাদের মায়েরাও। তাদের কাছে আমি চিরজীবন কৃতজ্ঞ। আক্রান্তের পর প্রত্যেকটা মূহুর্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছি। প্রিয়জনদের দূরে রেখে আবদ্ধ জীবন যে কতটা কষ্টকর হতে পারে তা বুঝতে পারছি এখন। আমি সবসময় স্বাধীনভাবে ঘুরতে পছন্দ করি। এই জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক শহর থেকে অন্য শহরে ছুটে বেড়াতে ভালোবাসতাম। আর সেই আমি কিভাবে একটি আবদ্ধ কক্ষে বন্দি জীবন কাটাচ্ছি!!
তবে আমাকে প্রতিটি মিনিটে বুঝতে বাধ্য করিয়েছেন, আমি একা নই, আপনারা সকলে আছেন আমার পাশে। এই ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ আর সাহস আমাকে সুস্থ হওয়ার জন্য যুগিয়েছে প্রেরণা। সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।