বীরেন মুখার্জীর এক গুচ্ছ কবিতা
হেমন্তের অর্কেস্ট্রা
সব পথ গন্তব্যে পৌঁছে না – এ জাতীয়
উপপাদ্য নির্মাণের প্রস্তাবনা দীর্ঘায়িত হলে
যার অনুসিদ্ধান্ত নিরর্থকতা তৈরি করে
প্রতিরাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একপ্রস্থ সঞ্চয়ী মুখ
অনুচ্চারে ডাকি তাই; যার সঙ্গে গাণিতিক কোনো
সম্পর্ক নেই; অথচ রাতের পৃষ্ঠাজুড়ে
সে বাজায় অন্যগ্রহে – হেমন্তের গোপন অর্কেস্ট্রা!
বৈচিত্র্যমুখি না হয়ে যে পথ, ক্রমাগত
বহুগামী পোশাকে চিত্রিত করে নিজেকে
তার আড়ালের মধ্যবিন্দু কোনো সমীকরণ মানে না
এজন্য গোপনবিন্দুর পেলবতা ঢেকে যায় গাঢ় কুয়াশায়
হেমন্তের ভেজা ঘাসে জমে ওঠে বাষ্পীকৃত ভাবনা।
নদীর তলদেশ, পাহাড়চূড়া কিংবা মেঠোপথ ঘেঁটে
যে সম্ভাবনা পাখা মেলেছে ইতিহাসে
তার কিঞ্চিত সঞ্চয় করেছি ব্যাকরণসিদ্ধ সরলরেখায়
পথ আমাকে উপপাদ্য শেখায় প্রতিক্ষণ
নিরর্থকতা সত্ত্বেও যার ত্রিকোণে আমার বসতি;
যদিও ঘরামির ঘর জোটে না, কোনওকালে!
ও বৃষ্টিদিন, ও সন্ধ্যা
মেঘের বুক ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে মেঘ – আত্মজসন্ধ্যায়; মনের মানচিত্রে
যে দাঁড়ায় রোজ, বৃষ্টির পদাবলি শুনে সে-ও ঘুমিয়ে পড়ে বুকের
জলাশয়ে! মাছরাঙার পালকে রৌদ্রের গন্ধ ঢেলে শতবর্ষী বৃক্ষ মাতাল
করে অলৌকিক জলের শরীর। তপদগ্ধ ব্যাকুল বিরহী -মনোস্নানে
তুলে নেয় বর্ষণসিক্ত সজীবতা আর ঋতুর পরিহাস ভেঙে সঞ্চয় করে
ঈশ্বরের ছায়া!
প্লাবন সন্ধ্যায় – মৌন আঁধারে ঝুলে আছে চাঁদের শরীর; এসো আজ
বুকের পাটাতন, মনোছল নিয়ে দূরে সরে যাক মেঘের ঘুড়ি।
শিল্প-চুম্বন
প্রথাগত রাত্রি যাপনের পর স্মৃতি হন্তারক দিন উঠে এলে
বরফকুচি ভোরের জানালায় লুকিয়েছি ভ্রমণচিহ্ন
শব্দের মৌনাস্ত্র জমা দিয়েছি পত্রগুঞ্জনে;
তবু শিল্প সন্ধানে আহত দেখি দিনের কঙ্কাল
সম্ভ্রম হারানো সম্প্রীতি থেকে তুলে নিচ্ছে বোধ
আর মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা
গতিময় আলোকট্রেন।
শিল্প সহযাত্রী, কুয়াশা ভেলায় অতিক্রম করে দীর্ঘপথ
সবুজ মন, পাতার লাবণ্য ছুঁয়ে ইট – সুরকির গুপ্তবৃন্দাবন
কখনো সংবৃত সময়ের ডানায় অলৌকিক উড্ডয়ন
আলপিনবিদ্ধ তালুতে মোহের ভগ্নাংশ নিয়ে
পার হয় উড়ন্ত জেব্রাক্রসিং
দেখি, বুক এক রুগ্ননদী, চারপাশে ধোঁয়াশা ভীষণ!
এখন কুয়াশা অনুবাদ করি, তুলে রাখি শিল্প-চুম্বন
কেননা, ঠোঁটেও সুপ্ত দেখি স্পর্শের বহুবর্ণ ক্ষত!