একজন গুণী মানুষের প্রস্থান
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন লেখক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ভ্রমণ প্রিয় গুণী মানুষ। একজন মানুষ তো প্রত্যেকের কাছে সমান প্রিয় হয় না, তার বহু কারণও থাকে। কিন্তু চাঁদপুরে আমার সাড়ে চার বছরের কর্মকালে যে অল্পক’জন মানুষকে সর্বদা কাছে পেয়েছি, যাদের থেকে ভালোর বাইরে মন্দ কিছু পাইনি, প্রকৌ. দেলোয়ার হোসেন তাদের অন্যতম। তাঁর সাথে সম্পর্কের বয়স অল্প হলেও সেটা ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমৃত্যু সেটা আমার ভেতরে ক্রিয়াশীল থাকবে। আজ তিনি আমাদের ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন, তাঁর স্মৃতি ও কর্মযজ্ঞের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অধ্যাপক মনোহর আলী স্যার মারা যাওয়ার পরে তাঁর সাথে অনেক কথা হয়েছে। তখন একটুও মনে হয়নি যে, খুব দ্রুত তিনিও চলে যাচ্ছেন! অবশ্য, এখন সময়টা এমন এসেছে, যে কোনও সময় নিজেও হারিয়ে যেতে পারি তবে একজন সাধু সজ্জন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর কথা কখনও ভুলবো না । লোক সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা-২০১৬ পেয়েছেন, তাঁর লেখা ‘চাঁদপুর বড় স্টেশন গণহত্যা’ বইটি গণহত্যা জাদুঘরের সিরিজ গ্রন্থমালার গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন যা বের হয়েছিল জার্নিম্যান বুকস থেকে, এছাড়া চাঁদপুরের লোকজ সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর প্রচুর লেখা বিভিন্ন কাগজে বের হয়েছে। জানামতে, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি চাঁদপুরের প্রতিটি গ্রামে গিয়েছেন, গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা দেখেছেন, লিখেছেন এবং তা নিয়ে কাজ করেছেন। নজরুল-রবীন্দ্র জয়ন্তীসহ বিভিন্ন সাহিত্যসভায় তাঁকে চমৎকার আলোচনা করতে দেখেছি। তাঁর চলে যাওয়া, চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে বড় শূণ্যতা তৈরি হয়েছে।
অনেকদিন তাঁর সাথে কালিবাড়ি থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে এসেছি, নানা বিষয়ে দীর্ঘ-অালাপনে আর কখনও আমাদের এমন পথহাঁটা হবে না, এটা ভাবতে বড় কষ্ট হচ্ছে। তবু ‘আমরা পলকা মানুষ আর ক’দিন বাঁচি’- আজ সবাই তো মৃত্যুর দিকে আগুয়ান। ফিরে ফিরে গত জীবনের পানে চেয়ে আনমনে যখন স্মৃতি ও প্রীতির চর্চা হবে ভেতরে-বাইরে, তখনও আপনার কথা মনে হবে, আপনার মুখ ভেসে উঠবে একজন শুভকামী সুনির্ভর-সঙ্গ হিসেবে! পরজীবনে আপনার ভালো হোক, আল্লাহ আপনার আত্মাকে চিরশান্তি দান করুন। আমিন।