মৃতদের ট্রল, শিক্ষা নেয়নি অন্যদল
রাজনীতিতে হিংসা বিদ্বেষ কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছিলো-আছে- থাকবে। কিন্তু এর একটা লিমিটেশন থাকা চাই। একদল আরেক দলের নেতার মৃত্যুতে শুকরিয়া জ্ঞাপন, মতের অমিল নেতার মৃত্যুতে হাসির রিয়েক্ট, মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে ট্রল করা, জাতীর জনককে নিয়ে ট্রল করা, দেশের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা সহ এহেন জঘণ্য অসভ্যতা আগামীর রাজনীতির জন্য আমাদের কিসের বার্তা দিচ্ছে? আমরা দায়িত্বশীলরা একবারও কি তা ভেবে দেখেছি? আমার মতে এটা একজন সুস্থধারার রাজনীতিবিদের জন্য অশনী সংকেত।
আজ একটি নির্মোহ সত্য আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরতে চাই। মাত্র কয়েক দিন গত হলো। আমাদের হাজিগঞ্জের সাবেক জনপ্রিয় (কাহারো কাহারো মতে) এমপি এম এ মতিন সাহেব দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এই সাবেক এমপি মতিন সাহেব পূর্ণ মেয়াদে দুইবার এমপি ছিলেন। এরমধ্যে তিনি ২০০১-এ নির্বাচিত হওয়ার পর গোটা হাজিগঞ্জে এমন কোন ইউনিয়নটি বাকী ছিলো যেখানে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি!অথচ উনি নির্বাচিত এমপি হিসেবে ওনার দলের নেতা কর্মীদের এসব অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমে হলেও একবারও কি ওনার নিজের অবস্থান ব্যাখা করেছিলেন? বরং উল্টো তিনি তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওনার পারমিশন ছাড়া পুলিশ যেন কোন ঘটনায় কোথাও মুভ না করে। এমনকি কোন ঘটনার জেরে কেউ যদি কোর্টে মামলা করে ওয়ারেন্ট ইস্যু করিয়ে থাকে ওনাকে জিজ্ঞেস করা ব্যাতিত পুলিশ যেনো একটা হুকুমও তামিল না করেন। ওনার এহেন দুর্বিনীতির স্বীকারতো আমি নিজেই হয়েছি- হয়েছে আমার গোটা পরিবার এবং তৎসময়ে ঘটনার স্বীকার ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। আমার দোকান-পাট পোড়ানো মালামাল লুটপাট ও বাড়িতে হামলার দায়ে আমি থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশতো আমার অভিযোগ আমলে নেয়নি। উপরন্তু অভিযোগ করতে গিয়ে পুলিশের দাবড়ানি খেয়ে দৌড়ে পালাইছি। এরপর বাকি সব ইতিহাস।
অথচ এই মতিন সাহেবের মৃত্যুর পর দেখেছি আমাদের আওয়ামী পরিবারের অনেক নেতার চোখের পানিতে পাঞ্জাবী গড়িয়ে পায়জামা ভিজেছে। আবার কোন নেতায়তো যেনো নিজের বাপকেই হারিয়েছেন। ওনাদের এফবি স্ট্যাটাসে আমার কাছে তেমনটিই মনে হয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। মতিন সাহেবের সাথে এই রকম অনেক আওয়ামী নেতাদের পারিবারিক সম্পর্কের জেরেই তা হয়েছে। এইরকম বিএনপি জামায়াত বনাম আওয়ামী কানেক্টেড পরিবার দলে এখন অভাব নেই। যারা দিনে আওয়ামী রাতে অন্যটা। এবং এরা দলেরটাও খায় পরেরটাও খায়। অথচ আমার মত এই রকম হাজারো নেতাকর্মী এই হাজিগঞ্জে আওয়ামী পরিবারে রয়েছে যাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এই দলের নেতারা দেখেনা।
মতিন সাহেবের (২০০১-২০০৫) ক্ষমতার ঐ পাঁচ বছরের শাসনামলে হাজিগঞ্জের রাজনীতিতে হত্যা জেল-জুলুম পুলিশি হয়রানি কারাভোগ রক্তাক্ত জখম কোনটা ঘটেনি? আজ আমাদের দলের নেতারা ভোট যুদ্ধে ব্যাক্তিগত স্বার্থের কারণে সব ভুলে গিয়ে ওদের একাংশের সাথে প্রণয় করে চলছেন। আর ওনাদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে আমরাও সব ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছি। আর ভুলে গেছি বলেই মতিন সাহেবের মৃত্যু নিয়ে আমাদের মনে শত কষ্ট থাকলেও আমরা ওনার মৃত্যুতে ট্রল করিনি বরং ইন্না-লিল্লাহ পড়েছি। এমনকি আমার সদ্য এসএসসি পাস করা ছেলেটিও এফবিতে স্ট্যাটাস দিয়ে মতিন সাহেবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। এটা আমাদের পারিবারিক শিক্ষা।
আমরা যাহা সমাজ ও ব্যাক্তিগত জীবনের জন্য মঙ্গলকর তাহা নিজে মানার চেষ্টা করি, নিজের সন্তানকেও তা-ই শিখাই। রাজনীতিতে আমরা ভন্ডামী করিনা। ক্ষমতার মোহে সবাই সার্থান্ধ হলেও আমি নই। দলের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে আমাকে বড় কিছু হতে হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনা।
এই দেশ সৃষ্টির পিছনে যাদের অবদান আজ তাদের মৃত্যু নিয়ে ট্রল হয়, দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ট্রল হয়। এফবি স্ট্যাটাস দিয়ে দলের প্রধান ও আমাদের মমতাময়ী মাতৃতুল্য প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা হয়। অথচ এসব নিয়ে কাহারো মাথা ব্যাথা নেই। দলের চেয়ার দখল করে রাখা কোন নেতার প্রতিক্রিয়া নেই। অথচ এরাই আবার পুনরায় দলের পদ পেতে মরিয়া। আমার লজ্জা হয় এদের নেতৃত্বে এখনো যে রাজনীতি করি। যে বা যাহারা আজ এহেন ঘৃণ্য অপকর্মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
মোঃ শামছুজ্জামান শামছু
সাংগঠনিক সম্পাদক
হাজিগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগ