সুবোধ মরিতে পারে না
সুবোধ একটি মানবীয় গুণ, যা অর্জন করতে হয় দীর্ঘদিনের সাধনার মাধ্যমে। সুবোধ অর্জনের পর ইহা লালন করাও রীতিমতো অনুশীলনের বিষয়। আশার কথা হলো,এই পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হয়েছে ” সুবোধ ” চর্চা দ্বারা।
আজকাল রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি প্রতিটি সেক্টরেই সীমাহীন দূর্বৃত্তায়নের ফলে এবং সর্বত্র অযোগ্যদের দখলদারীত্ব-দৌরাত্ম্যের কারণে অনেক বিজ্ঞজনদেরই বলতে শুনি সুবোধ বিদায় নিতে যাচ্ছে।
বি.বাড়িয়ার আমাদের সুচিন্তক বন্ধু আহমেদ হোসাইন গত ৪ জুন /২০২০ তারিখে তাঁর Facebook পেজে একটি পোষ্টে আক্ষেপ করে বলেছেন, ” অবশেষে সুবোধ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালো যে, সে তার মৃত্যু চায় “। আহমেদ হোসেন সাহেবের মত একজন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞজন, যিনি আজীবন সুবোধ লালন করে আসছেন, তাঁর মুখেও এই আক্ষেপ !
বোধ থেকে সুবোধ। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ যখন জঙ্গলবাসী ছিল ” ঘর্ষণে আগুন জ্বলে” — এই বোধ থেকে মানবোন্নয়ন শুরু। তেমনি ভাবে সুবোধ এরও একটি সময়কাল আঁকতে পারি। খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ৪ শত বৎসর পূর্বে মহামতি সক্রেটিস যখন ঘোষণা দিলেন-” Knowledge is Power ” – তখন থেকে ” সুবোধ ” এর জন্ম বলতে পারি।
সুবোধ মরে যাওয়ার আগে কিছু জবাব দিয়ে যেতে হবে – ১৮৫৭ সালে যে সিপাহীরা ফাঁসিতে ঝুললেন, সূর্যসেন – ক্ষুদিরাম- প্রীতিলতারা দেশের তরে জীবন দিলেন, সালাম- বরকত- রফিক-জাব্বাররা ভাষার জন্য রক্ত ঢাললেন, ৩০ লাখ শহীদ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিলেন তাঁদের কাছে এবং “দধীচি”- এর চেয়েও বড় সাধক, আমার দেশের চাষাদের কাছে “সুবোধ” কে জবাবদিহি করতে হবে।
জবাব দেয়ার সাধ্য সুবোধ এর নাই। সুতরাং সুবোধ মরতে পারে না।
“”হে মহামানব, একবার এস ফিরে
শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রাম নগরীর তীরে /
এখানে মৃত্যু হানা দেয় বার বার
লোক চক্ষুর আড়ালে এখানে জমেছে অন্ধকার
—– —— —
এখানে শুকনো পাতায়
আগুন জ্বালো ।।
খাল- বিল- নদী- নালা- গাঙ তথা মনুষ্যত্ব রক্ষার জন্য সুবোধ বেঁচে থাকবে ; কু-প্রবৃত্তিগুলোকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর জন্য।
“সুবোধ” এর জয় হোক।