রোগীর সন্তানকে মারধরের ছবি তোলায় সাংবাদিকের উপর হামলা
শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে এভাবেই মারধর করে আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে তারা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয়।
এক রোগীর সন্তানকে মারধর করার ছবি তোলার সময় নারী সাংবাদিকসহ দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে কোডিভ-১৯ ডেডিকেটেড মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আনসার সদস্যরা। এই সময় দুই সাংবাদিককে বেঁধে রাখারও হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ থাকলেও তারা ঘটনাটিকে দুঃখজনক বলে চলে যান।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের ভেতরে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটোসাংবাদিক জয়ীতা রায় ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটোসাংবাদিক হারুন অর রশীদ ওরফে রশীদ রুবলের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। মুগদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলতাফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামলার শিকার জয়ীতা রায় বলেন, ‘আমি ১০টা ৩৬ মিনিটের দিকে মুগদা হাসপাতালের সামনে যাই। আমার স্কুটি পার্কিং করে ক্যামেরা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে যাই। গিয়ে দেখি রোগী ও রোগীর স্বজনদের লম্বা লাইন। এদের ভেতরে ক্যান্সার আক্রান্ত এক মায়ের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার জন্য টিকিট নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিল এক যুবক। কিন্তু একজন আনসার সদস্য ভেতর থেকে বের হয়ে ঘোষণা দেন, আজকে আর নমুনা নেওয়া হবে না। কিন্তু ৪০ জনকে টিকিট দেওয়া হলেও ৩৪ জনের নমুনা নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ করেন ওই যুবক। এরপর আনসার সদস্যরা তাকে ধরে মারধর করে। টেনে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়। এই ছবি তুলতে দেখে আনসার সদস্যরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমি প্রতিবাদ করলে, তারা আমাকে মারতে এগিয়ে আসে। আমি কিছুটা পিছিয়ে আসায় থাপ্পড় গায়ে লাগেনি। এই ঘটনা দূর থেকে দেখেন দেশ রূপান্তরের সহকর্মী রুবেল রশীদ ও ডেইলি স্টারের আনিসুর রহমান। সেখানে রোগীর স্বজনরাও আনসারদের খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদ করে। তা শুনে আমাদের অন্য সহকর্মীরা এগিয়ে আসেন। এরপর আনসার সদস্যরা সবাইকে বের করে দেয়। আমরাও গেটের বাইরে চলে আসি। কিন্তু রোগীর স্বজনদের সঙ্গে তারা খারাপ ব্যবহার করেই যাচ্ছিল।’
হামলার শিকার অপর সাংবাদিক রুবেল রশীদ বলেন, ‘হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য ৪০ জনকে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু ৩৪ জনের নমুনা নেওয়ার টিকিট দিয়ে বলেন আজকের মতো টিকিট দেওয়া শেষ। লাইনের তখন ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা শাওন হোসেন নামের এক যুবক আনসারের এই ঘোষণার প্রতিবাদ করে। তখন আনসার সদস্যদের সঙ্গে তার তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে আনসাররা তার গায়ে হাত তোলেন। তাকে টেনে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়। এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে ফটোসাংবাদিক জয়ীতা রায়কেও মারতে আসে আনসার সদস্যরা। এরপর ঘটনার ছবি তুলতে আমি এগিয়ে যাই। গেট বন্ধ থাকায় আমি গেটের ওপর থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করি। তখন আনসার সদস্যরা থাপ্পড় মেরে আমার ক্যামেরার ফিল্টার ভেঙে ফেলে। এরপর আমি তার কাছে এমন আচরণের কারণ জানতে চাই। তখন এক আনসার সদস্য আমাকে হুমকি দেয়। এরপর আমি গেটের ভেতরে যাই। তখন সেই আনসার সদস্য সাংবাদিকদের গালিগালাজ করতে থাকেন এবং বেঁধে রাখার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন- এখানে সাংবাদিকদের রংবাজি চলবে না, আমাদের রংবাজি চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সময় পুলিশের একটি গাড়ি সেখানে ছিল। তারা সব দেখল, কিন্তু কিছুই বলেনি। আমরা ঘটনাটা পুলিশকে জানাই, কিন্তু পুলিশের ওই সদস্য কেবল দুঃখজনক মন্তব্য করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।’
অভিযুক্ত আনসার সদস্যের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি মুগদা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন।
মুগদা থানার এসআই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘শুনছি মুগদা হাসপাতালে সাংবাদিকদের ওপর একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ থানায় আসেনি। সবাই চলে গেছে।