কালো মেয়ে
আজ অনেকদিন পর আয়নার সামনে বসলাম;
কাজের চাপে বসাই হয় না।
আয়নায় নিজেকে চেয়ে দেখছি অনেকক্ষণ;
মেলাচ্ছি ফোনের ওয়াল পেপারটার সাথে।
এ আর আমি একজন-ই তো তাই না,
তবে কেন এতো দূরত্ব আমাদে
এ ছবিটা আমার ফেসবুক প্রোফাইল পিক;
এ ছবিটা কভার
আর এ ছবিটা ইন্স্ট্রা প্রোফাইলে টাঙানো;
তাতে কত মানুষের ভালোবাসা,
কত আবেগ মেশানো।
অথচ- গত প্রোগ্রামে যখন আমি চোখে গাঢ় কাজল পড়ে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে
চুলগুলো ছেড়ে হালকা লেমন কালারের শাড়ি পড়ে গেলাম।
কই- কেউ তো ফিরেও তাকালো না।
বললো না তুমি, অপূর্ব
পাড়ার রাজ দাদা কে অসম্ভব ভালোবাসি আমি,
পড়াশোনায় ভালো,দেখতে সুন্দর সে সুপুরুষ মন কেড়েছে আমার মতো হাজার নারীর!
ফ্রেন্ডলিস্টে তার কত্ত সুন্দরীদের আনাগোনা
সবার সাথে তার কি মিষ্টি ব্যাবহার
অথচ, আমি!
আমি তার কাছে ফেলনা!
একবার গিয়েছিলাম ভালোবাসার আবেদন নিয়ে; মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো সে…
তারপর হতে প্রার্থনা হয়েছিলো ভালোবাসা পাওয়ার পথ
বয়স বাড়ছিলো,বাবা-মা সমন্ধ দেখছে।
পাত্রপক্ষ এলো, ছেলে কালো
কিন্তু ব্যাংকে জব করে।
মেয়ে দেখে বললো, কালো মেয়ে
না হবে না!
তখন থেকে নিজেকে সুন্দর করার অসম্ভব বাতিক পেয়ে বসলো আমাকে,
ফর্সা হবার ক্রীম, নানারকম পরিচর্যাতে ব্যাস্ত হলাম
বিউটি সেলফি দিয়ে তোলা শুরু সেলফি
তারপর, একদিন রাজদা কে বললাম রাজদা
বললো,রঙ চঙ মেখে এসছিস বড়!
কালো রঙ ঢাকার এত্ত শখ
হুহ, নিজেকে ভালোবাসতে পারিস না তো অন্যকে ভালোবাসবি কেমন করে।
কতরকম অপমান, কতরকম অভিযোগ তার ছিলো
কলেজের এক বন্ধু কে ভালো লাগতো, সেও আমার ফিলিংস হেসে উড়িয়ে ফর্সা একজনের হাত ধরলো,
একদিন স্বপ্নের রাজপুত্রের মত এলো বরবেশে একজন,
ভেবেছি রুপের আভা না, তার চাই আমার ভালবাসা ।আঁকড়ে ধরা স্বপ্নে আঘাত পড়লো তার কথাতে;
পূজোর ডালির মত নিজেকে উজাড় করার পর তার পরিবারের মুখে হাসি নেই,
বউ কালো,বাচ্চাকাচ্চা কালো হবে…
ভগবান হাত ধরে বাঁচালো
বাচ্চাগুলো ফর্সা হলো…
ততদিনে আমার চাকরি হলো;
প্রোগ্রাম – পার্টিতে আমি বড্ড বেমানান। পরিচিত মামার দৌলতে পাওয়া চাকরি বলে চাকরিটুকুই করা জোটে কপালে!
কারণ, আমি কালো। প্রতিবন্ধী শিশুর মত আমি সবার করুণা পেয়ে চলেছি ;
আমি কালো, কবির চোখে তার কবিতার লাইনের উপমা,কিন্তু এ সমাজে আমার রঙটা বড্ড বাজে!
তাই এতো তোড়জোড় আমার নিজেকে সুন্দর করে তোলার!
তবু নেই অভিযোগের কমতি!
আয়না ছেড়ে উঠলাম; উঠার আগে কালো একটা টিপ পড়ে নিলাম-
সমস্ত অভিযোগের শেষে এ কালো টিপটাই আমাকে স্বস্তি দেয়;
আমি নগণ্য হতেই পারি, এ একরত্তি টিপের গর্ব, তার গ্রহণযোগ্যতা আমার রঙের অক্ষমতা ঢেকে দেয়,
বাড়িয়ে তোলে আমার প্রাপ্ত স্বগর্বের প্রতিকৃতির সম্মান।