ফিরে দেখা রাজনীতি (শেষ পর্ব )
২০০৮ সালে ফের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা। আমি এলাকার কিছু মানুষের চাহিদামতো অনুপস্থিতিতে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হলে দায়িত্ব নিতে বাধ্য হই। এতে আমাকে কমপক্ষে মাসে একবার দায়িত্ব পালনে স্কুলের সভা করতে হাজিগঞ্জ যেতে হতো। এমপি রফিক সাহেবের প্রত্যক্ষ আন্তরিকতায়, মাঈনু গাজী ও খসরুর সহযোগিতায় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরিশ্রমে, উৎসাহে কম্পিউটার ল্যাব, এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র (যা অতীতে চেষ্টা করা হয়েছে কিনা জানা নেই) নতুন ভবন, নতুন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি করতে সক্ষম হই। ততকালীন প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক, যুগল কৃষ্ঞ হালদার, কামরুল ইসলাম বিএসসি সহ সকল শিক্ষক এবং কমিটির সকল সদস্যের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করতেই হয়। এমপি রফিকুল ইসলাম সাহেবকে স্কুলে নিয়ে অনুষ্ঠান করলাম। তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, রশিদ সাহেব কখনো এখানে আসতে দাওয়াত দেননি। এমনকি এই স্কুলের এত খারাপ অবস্থা কখনো তাঁকে বলেননি। সত্যি উনি অনেক সহযোগিতা করেছিলেন উন্নতি করতে এই স্কুলের। এমনকি যখন শুনলেন আমি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি, তখন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য একটি কম্পিউটার ল্যাব দিলেন। যদিও সেই রশিদের ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে আমি ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আর বেশি মেয়াদের জন্য আগ্রহ দেখাই নাই কারণ পাওয়ার চেয়ে আমার দেয়ার ছিল অনেক আনন্দের। আমি নির্বাচন করে কোনো কিছুর পদ নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না ( বলা যায় হেরে যাওয়ার ভয়ে। সমাজ, দেশ, তাই বলে)। কিন্তু অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমি ছেড়ে আসার পর মডেল স্কুলের তালিকা থেকে এই স্কুলের নাম বাদ পড়ে যায় একনেকে পাশ হওয়া সত্ত্বেও এবং আবারও হাজিগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল তালিকাভুক্ত হয়। তার জন্য আমি মনে খুব কষ্ট পাই। যদিও এর আগে বন্ধু রশিদ প্রায় দশ বছর বিভিন্ন মেয়াদে স্কুলের সভাপতি এবং সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আবার যখন সভাপতি হয় তখন সে উপজেলা চেয়ারম্যানও। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে ২০১৯ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে দলের নমিনেশন পাননি। এমনকি ঐ বছরই স্কুলের সভাপতি পদে নির্বাচন করে গাজী মাঈনু উদ্দিনের কাছে হেরে যান।
আমার মা মারা যান ২০১১ সালে। আমার মেজ ভাই ২০০৪ থেকে হাজিগঞ্জ থাকতেন। তিনি আমাকে হাজিগঞ্জের সব কর্মকান্ড ছেড়ে দিতে বললেন। এও জানালেন, না হলে হাজিগঞ্জের কিছু দুর্নীতি গ্রস্ত মানুষ আমাকে মেরে ফেলবে। যা আমি আমার অবর্তমানে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর টের পেয়ে ছিলাম (একটি চক্র আমার নাম ও ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছিলেন তাদের স্বার্থে) । তাই আস্তে আস্তে নিজেকে এলাকা থেকে গুটিয়ে নিলাম। শয়তান, হিংস্র কিছু মানুষকে, রাজনীতিবিদকে, এমনকি আপনজনকে চেনার সুযোগ হয়েছিল। তাইতো ভাবি শিক্ষক পিতা কেন রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দুরে থাকতে বলেছিলেন? যাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করেছি রাজনীতিতে, নির্বাচনে, তারাই আমাকে সহযোগিতা দুরে থাক অপমানিত লাঞ্চিত করতে ছাড়েনি। তাতে আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে আমি মনে করিনা। ভালো ও কল্যাণের কাজে পদপদবি, প্রচারণা লাগে না কারণ এগুলো করতে হয় নিজের আত্মার সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
মাঝে একবার খালাতো ভাই মাহবুবুল আলম লিপনের মেয়র নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় গিয়েছিলাম। রব মামার পরে এই প্রথম দল থেকে আপন কেউ নমিনেশন পেল এবং পাশ করলো।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি এলাকার অনেক নেতা একত্রে স্লোগান তুলে ছিলেন “মেজর ছাড়া নৌকা চাই”। উনারা তাদের যে কেউ একজন হলেই সন্তুষ্ট থাকবেন তাই চেষ্টা করছিলেন যা একটি বড় রাজনৈতিক দলে হয়েই থাকে। যদিও রফিক সাহেব নমিনেশন পাওয়ার পর মোটামুটি সবাই দলের প্রার্থীর পক্ষে কম বেশি কাজ করেছেন। আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি তাই সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে দূর্বল থাকি। তাই আবার যেতে হলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের একদিন আগে এবং জয়ের পরে।
আমি মনে করি মরহুম আবদুর রবের পর আমাদের এলাকায় আজ পর্যন্ত যোগ্য কোনো ব্যক্তি রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পারেননি যে জনপ্রতিনিধি হয়ে গণমানুষের সাথে থাকবেন। কবে পাব বা আধো পাবো কিনা সেই একজন, ভবিষ্যত বলে দেব। এখন পর্যন্ত সবাই আমরা সুযোগ সন্ধানী, সুবিধাবাদী, চাটুকার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
কিন্ত হায় আবার হারিয়ে গেলে সেই ত্যাগীরা যা আজ অব্দি চলছে। অবশ্য কেউ যদিও অতি নগণ্য আবার তেলবাজি করে সুবিধাভোগী হয়ে আছে আজও তরতাজা। হারিয়ে গেছে ত্যাগী ও আদর্শের আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা কর্মীরা, এরা যে সব সময় দিতে জানে দলের দুর্যোগে, বিপদে আর ঘুটিয়ে নেয় নিজেদেরকে নিভৃতে নির্জনে। যারা আদর্শকে ধারণ করে হৃদয়ে আর কর্মে। রাখে না শুধু দেখানো স্লোগানে স্লোগানে, পোশাকের বাহ্যিকতায়। তাইতো আজ এদের সংখ্যা কমতে কমতে এসে গেছে দশ শতাংশের নীচে। কয়েক বছর পর হয়তো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। কারণ তারা যে দিতে দিতে সম্পদ শুণ্য, দুঃখ কষ্ট নিয়ে, আরাম আয়েশ ত্যাগ করে প্রায় নিঃশেষ। ক্ষমা করুন আমাকে। সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই সেইসব বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের। থাকুন সততা, আদর্শ আর নীতিতে কেউবা পরপারে কেউবা ইহকালে। নাইবা পেলেন কিছু আপনাদের জীবনকালে। তৃপ্তি আর প্রাপ্তি আছে, থাকুক, মিশলেন না যে তথাকথিত মানুষরুপী পশুর পালে।
সম্পুর্ন নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও মতামত।
বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান জেলে থাকাকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের কতিপয় নেতাদের মাঝের দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্যের কথা কিছু শুনেছি। সত্যমিথ্যা জানি না। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতির পরিবর্তনের কিছুটা আঁচ হাজিগঞ্জে ছাত্রলীগের রাজনীতির কিছু নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধা কতিপয় ব্যাক্তির জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কিছুটা হলেও বিভেদ তৈরি করেছে। যা ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের হত্যার পর মোশতাকের নেতৃত্বে (কিছু আওয়ামী লীগ নেতা সহ) সহযোগী হিসেবে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় যাওয়া এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে কতিপয় নেতার কারণে আওয়ামী লীগ একত্রে নির্বাচন করতে না পারা (মিজান আওয়ামী লীগ মই মার্কা নিয়ে) , বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দলকে বিরাট শূণ্যতায় ফেলে দিয়েছিল। ঠিক সেই দুর্যোগে ও শূণ্যতার মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিদেশ নির্বাসিত হতে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দেশে এসে দলের দায়িত্ব ভার নেয়া হতাশাগ্রস্ত, নির্যাতিত নেতা কর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এমনকি শেখ হাসিনা সভানেত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পরও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দলের অনেক নেতার দল ত্যাগ না করে তলে তলে আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতীক প্রাপ্ত দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করায় ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি এলাকায় যা প্রকাশ্যভাবে দৃশ্যমান ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মী সমর্থকদের উপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন, মামলা, হামলার হিংস্র থাবা পড়েছিল। হাজিগঞ্জ উপজেলার প্রচুর রাজনৈতিক নেতা কর্মী এই সকল কারণে জীবন দেয়াসহ অনেক বছর চাঁদপুর আদালতে যাওয়া আসা করতে হয়েছে। তারা কখনো দল কর্তৃক মূল্যায়িত হয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। আমার জানা মতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও এই সব মামলা চলছিল। যা খুবই বেদনার এবং দুঃখের।
হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এলাকায় না থাকা, অন্য দলে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা করে জনগণ যাদের জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতা নির্বাচিত করেছিলেন উনারা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সেই আশা আকাংখার প্রতিফলন গঠাতে পারেনি। যেমনটা পারেনি সৎ ও আদর্শের ভিত্তিতে নতুন নেতা তৈরী করতে। সুযোগ দেয়নি কোনো সৎ ও আদর্শের মানুষদের বরং নানাভাবে হেনাস্তা, অবমূল্যায়ন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে এবং বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে তাদের একটা বিষয় লক্ষ্য করছি অধিকাংশ টেন্ডার / সুবিধা পায় অন্য দল থেকে আগত বা বিএনপি জামায়াতের লোকজন। দলের অনেকেই চেষ্টা করেও লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কাজ পায়নি বা পায় না বলে অভিযোগ করছেন। আবার দলের অনেক ঠিকাদার (সংখ্যায় কম হলেও) কাজ পেয়ে অন্য দলের বা হাইব্রিডদের কাছে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন বলে শুনেছি। সর্ব ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করে, যা হাজিগঞ্জে টেন্ডার/কাজগুলো অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত পর্যালোচনা করলেই পরিস্কার হবে। যেহেতু আমি বাস্তবে জড়িত নই তাই সঠিক পরিসংখ্যান দিয়ে বলতে পারব না। তবে এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি সব সময় বিএনপি জামায়াতের এবং দলের হাইব্রিড খ্যাত লোকরাই প্রচুর টাকা আয় করেন সবসময় সরকারি বা বিরোধী দলে থাকাকালীন কিন্তু কেন? অথচ বলার অবকাশ রাখে না যে আওয়ামী বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে এ পক্ষের কেউ কোনো টেন্ডার /কাজ পাওয়া দুরে থাক, জেল জুলুমের ঠেলায় নিজ এলাকায়ই অনেকে থাকতে পারেননি ও পারে না। পরবর্তীতে সেই টাকা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে কাজে লাগায় যা প্রমাণিত সত্য। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বরকত সাহেব গবেষণার মাধ্যমে তা বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। তাদের হয়তো ভয় কাজ করছিল বিকল্প নেতৃত্ব উঠে আসলে তাদের দ্বারা হুমকির মুখে পড়ার। যা ছিল দলের জন্য ভুল। নিজ দলেই যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নাই বললেই চলে তখন খারাপ ছাড়া কি আর আশা করা যায়। তাইতো দলে সৎ ও আদর্শ মানুষের এক শূন্যতা দেখতে পাচ্ছি।
দলে গণতন্ত্র চর্চা ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মেয়াদ এটি পরিস্কারভাবে পরিলক্ষিত যে নেতৃত্ব নির্বাচন ও নমিনেশন দেয়া হয় তৃণমুলের মতামত না নিয়ে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা। এমনকি হাজিগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন নগণ্য সদস্য হিসাবে আলী আজ্জম মজুমদার ও হোসেন ইমাম হায়দার কমিটির পর তৃণমূলের কথা বলার স্বাধীনতার সুযোগ সহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বর্ধিত সভা আজ পর্যন্ত হয়েছে বলে জানা নেই।
যদিও গত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী তালিকা তৈরীতে একটি সভা ডাকা হয়েছিল হাজিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যেখানে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল কিন্তু তৃণমূল প্রতিনিধিদের মতামতে ভিত্তিতে ভোটের মাধ্যমে তালিকা না করে জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেলেন। কি তালিকা করেছেন তা আজও কেউ জানতে পারলো না। এতে তৃনমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের অবমূল্যায়ন করে অপমানিত করা হয়েছে এবং অবিরত হচ্ছে বলা যায়। ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের কথা শুনা বা তাদের বলতে দেয়ার মধ্যে মনে হয় ভয় অথবা উপেক্ষা কাজ করে। যার ফলে জনগণ ও কর্মীদের কাছে নেতা, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা নাই বললেই চলে। এরমধ্যে কিছু রাজনীতি বিমুখ মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঋণী থাকা, দায়বদ্ধতার কারণে উনার দলের পক্ষে বিভিন্নভাবে কাজ করতে গিয়েও অবহেলা, উপেক্ষিত হয়েছে বলে পরিলক্ষিত। এই ভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের কর্মকান্ড। এখানে আর আগের মতো নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়”, “নূরুলদিনের সারা জীবন’ ইত্যাদি। পরিবর্তে গড়ে উঠলো অগনিত সংগঠন যা শুধু নামে ও সুবিধা নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চাঁদপুর জেলার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা থাকা সত্ত্বেও কখনো উনাদেরকে বিভিন্ন ইউনিয়ন, উপজেলায়, জনসংযোগ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কার্যক্রম শুনিনি বা চোখে পড়েনি, জেলা নেতারাও প্রায় নিস্ক্রিয়। এতে দলের সংগঠনিক দূর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে এবং সাথে সাথে ঐ সব নেতাদের দায়িত্বহীনতা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যা ছিল অনভিপ্রেত।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পরবর্তী বক্তৃতা গুলো যখন শুনি অবাক হয়ে যাই কি ভাবে এই নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক মানুষটি সত্য উপলব্ধি এবং অন্তর থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যাওয়া প্রতিটি জনসভায়। সত্যি উনার মতো সৎ ও আদর্শবাদী নেতার আজ বড্ড অভাব অনুভূত। অতীতের সৎ ও আদর্শ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে দলে কাজ করতে দেয়া হয়নি। যদিও এখনো কিছু নেতা কর্মী পারিবারিক ঐতিহ্যগত কারণে দলে নামকা- ওয়াস্তে আছেন সুবিধাবাদীদের মাঝে অস্তিত্বের সংকট নিয়ে। কিন্তু সব কেন্দ্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াতে সুবিধাবাদীরা সবাই টাকা, তোষামোদি, চামচামির মাধ্যমে নীতি নির্ধারকদের বা তাদের কাছাকাছিদের নিকট ধরনা দিয়ে সব কিছু নিয়ে যায়। শুধুমাত্র দলের প্রতীক নিয়ে এলাকায় নির্বাচন পূর্বে গিয়ে জয় নিয়ে ফেরত চলে আসে। পরাজয় হলেতো ঐ পথ মাড়ানোর প্রসঙ্গই আসে না। ঠেঙানি আর দাবড়ান খায় তৃণমূলের ত্যাগীরা। আর ঐসব সুদিনের পাখীরা প্রয়োজন ছাড়া এলাকায় যান না এবং থাকেনও না। নমিনেশন ও নির্বাচন পূর্বে যেভাবে তথাকথিত জনদরদী নেতাদের এলাকায় বিচরণ করে মানুষের কল্যাণের / কবর জেয়ারত / বিভিন্ন মসজিদ মন্দিরে, প্রতিষ্ঠানে কিছু দান, সদকা, দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা ইত্যাদির নামে সমর্থন পাওয়ার জন্য দিলদরিয়া হয়ে চোখের অশ্রু পেলেন। নমিনেশনের পরে এবং নির্বাচন পরে উনাদের দরদ নিয়ে বা চেহারা দেখানোর জন্যও যেতে দেখা যায় না। কি অদ্ভুত জাতীয় মানুষ তথাকথিত নেতা হয়ে জনপ্রতিনিধি হতে চায় এবং হয়েও যায়। উনারা নির্বাচিত হলে কি এলাকার, জনগণের, দেশের বিন্দুমাত্র উপকার হবে মনে হয়? এই ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে বসবাসরত কিছু নেতা উঠে আসলেও তারা নিজেদেরকে সুবিধাবাদীদের ধারার গা ভাসিয়ে দিয়ে তোষামোদিও চামচামির মাধ্যমে ব্যক্তিগত লাভ খুঁজতে গিয়ে একটি সময়ে হারিয়ে যাচ্ছেন তাদের নিজেদের যোগ্যতা ও আদর্শ সততার অভাবে। অতীতে গ্রামেগঞ্জে, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলায় রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মানুষের কাছে যেতে, জানাতে, প্রতিনিয়ত জনসমাবেশের আয়োজন হতো, যা বর্তমানে একবারেই অনুপস্থিত। রাজনীতি, নির্বাচন, টাকা রোজগারের মাধ্যম হিসাবে গণ্য হয় বলে সকলের কাছে এখন অনেকটা প্রমাণিত সত্য । সৎ ও আদর্শ ত্যাগী মানসিকতার মানুষের মাঝে অনীহা, অনাগ্রহ। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক যা আমার কাছে বোধগম্য নয়, দলের উপরের পদ পদবি ব্যতীত প্রচুর শিক্ষিত সমর্থক আছেন যারা দলের ভারী পদপদবী পাওয়া থেকে সম্মানের বেশি গুরুত্ব দেন। দলের বিভিন্ন স্তরের ভারী পদধারী নেতা, জনপ্রতিনিধিরা প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সভাপতি পদ নিজেরা বা জেলা, উপজেলা সরকারি চাকরিজীবীদের অর্থাৎ ডিসি, ইউএনও প্রমুখদের দায়িত্ব নেন বা দেন। অথচ এই সকল সম্মানিত পদগুলো দলের সেই সকল সদস্য, সমর্থকদের দিয়ে সম্মানিত করলে প্রতিষ্ঠান ও দল তথা দেশ বেশি উপকৃত হতো বলে আমার বিশ্বাস। হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি উপজেলায় এই জিনিসটি বেশি লক্ষণীয়। যার ফলে শিক্ষিত সমর্থকরা দলে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন।
এখন রাজনীতি এবং নির্বাচন করতে প্রয়োজন অর্থ, তোষামোদ, চামচামির মাধ্যমে উপরের নেতাদের সাথে গভীর সম্পর্ক। জনপ্রতিনিধিদের দলের নমিনেশন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েও দলের কাছে জবাবদিহি, দায়বদ্ধ না থেকে উল্টো দলকে তাদের নির্দেশ মতো চলতে বাধ্য করা হয়। তাইতো নেতা,কর্মী, সমাজের সকল মানুষকে এই সকল জনপ্রতিনিধিদের কাছে সরাসরি বা চামচা, ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে তদবির করতে হয় ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। যা দলের ভবিষ্যতে একটি সুন্দর নির্বাচনে জয়লাভ করা ও দলের অস্তিত্ব রক্ষায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই । আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল হিসাবে ইহার আয়ুস্কাল বা বলিষ্ঠতা নিয়ে চলমান থাকা কেন জানি মনে আশংকার উদয় হয়। আগের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রের, কর্মকান্ডের প্রতিফলন দেখা যায় না। এখন রাজনীতি করতে যাওয়া চাওয়া একটি বড় অংশের কিছু পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ । কেউ নগদ, কেউ আলিসান বাড়িগাড়ি, কেউবা ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী / পোষ্যদের বিদেশে নাগরিকত্ব বা দ্বিতীয় হোম ইত্যাদি ইত্যাদি। এখনকার রাজনীতিতে স্যারদের আধিপত্য বেশি, রাজনৈতিক ভাইদের নাই। স্যাররা যেমন সাধারণ মানুষের ভাই হতে পারেননি, তেমনি ভাইরা স্যার হতে যাননি। মুজিব ভাই হয়েছিলেন জাতির জনক এবং একটি স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু তিনি স্যার হতে চাননি / যাননি কিন্তু ভাই হয়ে এখনো আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে মুজিব ভাই হিসাবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র জনতা, নারী পুরুষ সবাই জীবন দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে হানাদার মুক্ত করে স্বাধীন করেছিলেন। অথচ চাঁদপুর তথা হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সহ সংগঠকদের, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে আজও কোনো রাস্তা, ব্রিজ, স্থাপনা ইত্যাদি চোখে পড়ে না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েই শহীদ মান্নান ভাইর নামে উনার চায়ের বা রেষ্টুরেন্ট যাওয়ার মার্কেটকে (নিউ মার্কেট নামে) উনার নামে “শহীদ আবদুল মান্নান মার্কেট” বলা হতো এবং মুক্তিযোদ্ধা নসু চৌধুরী সাহেব পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন পূর্বতন ষ্টেশান রোড মকিমাবাদের “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলী আজ্জমের” নামে স্মৃতি (নাম) ফলক লাগানোর পরও তা বাস্তবায়ন হতে দেখি না। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আবদুর রবের নামে অনেক দাবী সত্ত্বেও আজও কোনো স্থাপনা উনার স্মৃতিতে হয়নি। গত বছর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে এলাকার সংসদ সদস্যের সাথে ( উনার নামেও একটা কিছু নামকরণ সহ) কথা বললে খুব একটা গুরুত্ব পাইনি। এমনকি হাজিগঞ্জ উপজেলা মুক্তযোদ্ধা অফিস স্থায়ীভাবে না করে পুরাতন অফিসটি জেলা পরিষদের বহুতল ভবন নির্মানের জন্য ভেঙ্গে দেয়া হয়।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উক্ত ভবনের নীচ তলা সহ কয়েকতলা প্রভাব শালীদের নামে ( যারা অধিকাংশ অধিক মুনাফায় / লাভে ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে বা দিবে ) বরাদ্দ দেয়া হলেও ঐ জায়গায় এতগুলো বছর ব্যবসা করা কেউ (হকার,নিম্ন আয়ের) এবং মুক্তযোদ্ধা সংসদ কোনো বরাদ্দ পায়নি। একটু খবর নিয়ে জানতে পারলাম অনেকেই পেয়েছেন যারা তদবির ছাড়া পাওয়ার কথা নয়। এদের কেউই এসব দোকানে নিজেরা ব্যবসা করবেন না। অথচ কেন যে এই সব নেতা গোছের মানুষদের দেয়া হলো বুঝতে অক্ষম। বর্তমান নীতি ও আদর্শহীন সুবিধাবাদী নেতাদের কারণে এসকল অপকর্ম চলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আমি অত্যান্ত ভারাক্রান্ত মনে বলতে চাই, আজ যদি মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকদের নামে এমনকি সৎ আদর্শের বুদ্ধিজীবিসহ মানুষের স্বরণে কোনো কিছুর নামকরণ করা না হয়, তাহলে বর্তমান সহ আগামী প্রজন্ম, অতীতসহ বর্তমান নেতা, জনপ্রতিনিধিদেরকে কেউ মনে রাখবে না। তাই ইতিহাসের স্বাক্ষীর স্বার্থে যদি দ্রুততম সময়ে এই কাজটি করার জন্য বর্তমান সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি সহ সরকারি দলের নেতাদের প্রতি হাতজোড় করে মিনতি জানাচ্ছি। বৃহত্তর কুমিল্লার তিনজন নামকরা মন্ত্রী (অর্থ, স্থানীয় সরকার,শিক্ষা) এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সওজ ও যোগাযোগ মন্ত্রী) সহ সকলের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা আমজনতা দাবী করা ছাড়া অফিসিয়াল কিছু করার ক্ষমতা নাই। তবুও জনতার দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রয়োজনে এই বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য যাথাসাধ্য ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করছি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, কেন জানি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রচার প্রচারণা খুব একটা ব্যপ্তি নাই। এটা বাড়ানো জরুরী বলে আমি মনে করি। নতুবা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে স্বাধীনতা পরবর্তীতে যেমন করেছিল তেমনি এই পক্ষের ক্ষমতায় থাকাকালীন একই অবস্থা হয়ে থাকে সবসময়, যা এখনো জোরালো ভাবে চলছে বলে দেখতে পাচ্ছি। তাই প্রচার সেলকে শক্তিশালী করতে এবং সকলকে যার যার থেকে জানা দেখা ইতিহাস (কথাগুলো) লিখে যেতে হবে বা লিখে যাওয়া উত্তম বলে আমি মনে করি। অত্যন্ত দু;খের সাথে বলতে হচ্ছে হাজিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধারা একতাবদ্ধ নয়। কখনো উনাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এসব দাবি করতে চোখে পড়েনি। এমনকি উনাদের সাথী শহীদ বা ইতিমধ্যে মারা যাওয়া যোদ্ধাদের স্বরণে কোন আলোচনা করতেও দেখিনি। এইসব করতে খুব একটা টাকা পয়সা লাগে না শুধু ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট। যেমন দেখিনি বার বার অনুরোধ করেও পারিনি পুরানো হারিয়ে যাওয়া সৎ ও আদর্শ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বরণে কোনো আলোচনা বা স্মৃতি চারণ করতে । বছরে অন্তত একটি দিন কি হতে পারে না এই ধরনের অনুষ্ঠান, পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা? দল,পরিবার বা উনাদের দ্বারা যারা আজ রাজনীতিতে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত তাদের কারো উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় । কৃতজ্ঞতাহীন হয়ে যাচ্ছে, ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ, দল এবং দেশ। তাহলে কি করে আসবে ভালো সৎ ও আদর্শ ত্যাগী মানুষ এসকল অকৃতজ্ঞদের কল্যাণে?
বর্তমানে যে সকল রাজনীতিবিদ বা ব্যাক্তি হাজিগঞ্জ-শাহারাস্তি এলাকায় ভবিষ্যতে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহী বা কাজ করছেন আমি নিরপেক্ষ ভাবে উনাদের মাঝে আদর্শিক নেতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি না। উনারাও নির্বাচন পরে আবার শহরে চলে এসে উন্নত জীবন যাপন করবেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ জনগণের দুঃখ কষ্ট দূর করতে / কমাতে উনাদের কোন কোনো কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়। এলাকায় সত্যিকারের একজন সৎ আদর্শ ভালো মানুষের খুব প্রয়োজন যিনি নেতা হয়ে এলাকায় থেকে কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। আল্লাহ যেন এমন একজন দেবদূত পাঠান আমাদের এলাকায়। (এখনকার নেতা/ জনপ্রতিনিধিদের কাপড়চোপড়ে বাহার বা চাকচিক্য দেখে অবাক হতে যাই। এই চাকচিক্য / স্যুট বা একেক দিনে নতুন নতুন বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখেই মনে হয়কি সৎ থেকে এসব কেনা, পড়া, সম্ভব? যদি না জাত বড়লোক হয়ে না থাকেন।)
আমি বিশেষ ভাবে অনুরোধ / আবেদন রাখছি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ত্যাগী, সৎ ও আদর্শ রাজনীতিবিদদের সন্তানদের কাছে আপনাদের পিতা, ভাই, পরিবারের কাছে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য, দলের জন্য অবদানের কথা আপনাদেরকেই বলে যেতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য। তাই সময় থাকতে একত্রিত হউন সকলে শুরু করুন সত্যি কথা বলতে। প্রয়োজন বা মন না চাইলে রাজনীতি দল করবেন না কিন্তু নিজেদের পূর্ব পুরুষদের / মানুষদের কথা, বলে যান সময় থাকতে। নয়তো হারিয়ে যাবে সত্য, মিথ্যার কাছে। তা হতে পারে না, হতে দিবেন অনুগ্রহ করে। বেঁচে থাকা অবদি আমার সাধ্যের মধ্যে সহযোগিতা থাকবে ইনশাল্লাহ। এই দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। জাগ্রত রাখতে হবে বাংলার সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালবাসা এবং সর্বোপরি মানবিকতা। বিখ্যাত প্রয়াত গায়ক ড. ভুপেন হাজারিকার গানে বলতে চাই -” মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না, হে বন্ধু?” ত্যাগী ও আদর্শ মানুষের জন্য মানবতা কাঁদে দুঃখে দুঃখে। আর হাইব্রিড সুবিধাবাদী চাটুকার তোষামোদকারীরা থাকে আনন্দে ও দুর্নীতির অট্টালিকায় সুখে।
হাজিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির তথা বাংলার ঐতিহ্যবাহী সমাজের অস্তিত্ব রক্ষায় খুব প্রয়োজন সৎ ও আদর্শ ত্যাগী মানুষদের ঐক্য, ভালো মহৎ কিছু করতে। তা না হলে হেরে যাবে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সংস্কার, মূল্যবোধ, আশা জাগানিয়া স্বপ্ন। তাই রাজনৈতিক দল না করেও লালন করা যায় পূর্ববর্তী প্রজন্মের সব, হতে পারে একটি সংগঠন। শুধু প্রয়োজন কিছু ভালো শিক্ষিত মানুষের উদ্যোগ, হতে পারে ক্ষুদ্র থেকে যাত্রা। যা অনেকের মনে জাগ্রত করতে পারে নতুন মাত্রা। হতে পারে দুর্নীতির, চাটুকার, তোষামোদকারীদের বিরুদ্ধে বিপ্লব। আওয়াজ তুলতে হবে পুরানো আমলের পাহারাদারদের মতো ” হুশিয়ার! জেগে রও, ওহে জেগে রও ” বলে চিৎকার।
“যাদের জীবনে কোনো উচ্চাশা থাকে না, তারা অনেক কিছু করতে পারে। কখনো কখনো সাধারণ মানুষের থেকেও অনেক বেশি “।
সবশেষে আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তির সামান্য এই লেখাটি যারা পড়ে অনুপ্রেরণা /পরামর্শ /সমালোচনা দিয়েছেন / করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর যারা রুষ্ট হয়েছেন, ভুল হয়ে থাকলে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদেরসহ সকালের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ক্ষুদ্র দেখা ও জানার মধ্যে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। জ্ঞানের, দেখার ও জানার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ত্যাগী নেতা, কর্মীর (অধিকাংশের) নাম উল্লেখ করতে পারিনি। সকলের প্রতি আমার অনুরোধ যার যার জায়গায় থেকে আপনার জানা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিখে যান। অনুগ্রহ করে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে না নিয়ে আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিনীত অনুরোধ রাখছি।
রবিন্দ্রনাথে সেই চয়ণ –
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ মোর কবিতাখানা কৌতুহল ভরে, আজি হতে শতবর্ষ পরে”
সেই ধারায় উল্লেখ করতে চাই আজি হতে শতবর্ষ পরে কেউ জানবে কি? এই বাংলায় রক্ত ঝরা বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের কথা ভাষার জন্য, মাতৃভূমির স্বাধীনতা তথা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে? তাইতো ইতিহাসের অংশ হিসাবে আজি হতে বছর বছর পরে প্রজন্মের জানার জন্য লিখে যান যার যতটুকু জানা, দেখা স্মৃতিতে থাকা বাস্তবতা।
আবারও কবিগুরুর কবিতার দুটি লাইন দিয়ে শেষ করছি।
” যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইবো না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে”।
মুক্তিযুদ্ধের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা। বঙ্গবন্ধু সহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলার মেহনতি মানুষের জয় হউক। হউক আদর্শ ও মানবতার জয়। (সমাপ্তি)