প্রিয় বিদ্যালয় (দ্বিতীয় পর্ব)

অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী মোহন
আপডেটঃ জুন ২৪, ২০২০ | ৭:২৫
অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী মোহন
আপডেটঃ জুন ২৪, ২০২০ | ৭:২৫
Link Copied!

প্রথম দিনের লেখাতেই ভেবেছিলাম প্রিয় বিদ্যালয়ের উপর লেখা সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু, না। ঐ লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর, আমি উপলব্ধি করলাম আমার মত এই বিদ্যালয়কে অগণিত মানুষ ভালোবাসে। যাদের অনেকেই এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে। তাদের অনেকের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা এবং অনুরোধের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় পর্ব লেখা হয়ে উঠেছে।

রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালে জুনিয়র হাইস্কুল থেকে পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে রূপান্তরিত হয়৷১৯৬৮ সালে এসএসসি পরিক্ষায় সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ করে। আজকে রামপুর স্কুল এক বিশাল কাঠামোর উপর অবস্থিত। এ অবস্থান তো একদিনে হয় না। এই বিদ্যালয়টি যাদের সম্পদ এবং দানের উপর আজকে এই পর্যায়ে এসেছে তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের কথা যদি স্মরণ না করি তাহলে ইতিহাস হয়ত আমাকেও ক্ষমা করবে না।

তাঁরা হলেন, প্রয়াত জমিদার রামপুর গ্রামের বাবু যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুরী তাদের অন্যতম। তার ও আগে সম্পদ দিয়ে যারা এই বিদ্যালয়টি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন তারা হলেন বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শস্থ মালিবাড়ির হরে কৃষ্ণের পূর্ব পুরুষগণ। তাদেরই উত্তরসুরীর কানু নামের একজন আজও বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। এদের কথা হয়ত অনেক আগেই স্মৃতি থেকে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ভূমিদাতাদের মাঝে বিশেষভাবে আরো যারা উল্লেখযোগ্য তারা হলেন মরহুম আব্দুল আজিজ সরদার, তার পত্নী মরহুমা ফরিদেন্নেসা বেগম এবং মরহুম হাফিজ উদ্দিন ব্যাপারী (রা.প্রা.বি)।

বিজ্ঞাপন

প্রথম পর্বের লেখায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে লেখা যথেষ্ট ছিল । আমার সভাপতি কালীন সময়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মাঝে প্র‍য়াত জগদীশ সাহা, অমলেন্দু বাবু, ধীরেন্দ্র সাহা, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুল হক সহ অনেকের কথাই আজ বিশেষভাবে মনে পড়ছে। মনে পড়ছে বিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া সহপাঠী আব্দুল আউয়াল পাটোয়ারী এবং ছোটভাই তুল্য মৈশাইদের শাহ আলম মজুমদারের কথা। ভাই বলে সম্বোধন করতাম এবং একই টেবিলে বসে রাজনীতি সমাজ নীতির চর্চা করতাম প্রয়াত ওসমান গণি মজুমদারের কথা। আমার সময়কার শিক্ষকদের মাঝে আজও বেঁচে আছেন ধর্মীয় শিক্ষক নওহাটার মাওলানা আব্দুস সাত্তার এবং আমার বিদায়ের বছর যোগাদানকারী শিক্ষক সাঈদ স্যার ও সিদলার তাফাজ্জল হোসেন স্যার। সাঈদ স্যারের মত এত ঠান্ডা মেজাজের শিক্ষক আমি আমার ছাত্র এবং শিক্ষক জীবনে কমই দেখেছি।তিনি এবং সহপাঠী আউয়াল স্যার সহ আমি ২০১৫ সালে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করি। আল্লাহ পাক আমাদের হজ্জ কবুল করুক।আরো বিশেষ ভাবে মনে পড়ে মাওলানা আব্দুস সাত্তার স্যারের কথা। কথিত ছিল যে, তিনি এতই বেশি উদার ছিলেন যে প্রশ্নের অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর লিখলেও নম্বর দিতে কার্পণ্য করতেন না। যার ফলশ্রুতিতে মাঝে মাঝে কেউ কেউ ১০০ তে ১১০ নাম্বার ও পেয়ে যেত। এই ধারা আমাদের পরবর্তী সময়েও অক্ষুন্ন ছিল কিনা তা আমার জানা নেই। শ্যামাবাবু নামের একজন শিক্ষক কতই না যত্নের সহিত ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন সে কথা আজ ও মনে পড়ে। মনে পড়ে, সৈয়দপুরের খণ্ডকালীন শিক্ষক প্রয়াত আবুল বাশার মজুমদার বিএসসি, ওরপুরের আব্দুর রশিদ বিএসসি, সৈয়দপুরের হাবিব পাটোয়ারী এবং রুহুল আমিন মাস্টার সাহেবের কথা। স্কুলের প্রয়োজনে জুনাব আলী মাস্টার সাহেবের বিশেষ অনুরোধে এরা পর্যায়ক্রমে স্কুলকে শিক্ষক হিসেবে সেবা দিয়েছেন।

এতক্ষণ তো শুধু শিক্ষকদের কথাই বললাম, ছাত্র জীবনে আমিও শুধু শিক্ষক ই পেয়েছিলাম, কোন শিক্ষিকা পাই নি। কিন্তু, সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় দুজন শিক্ষিকা পেয়েছিলাম। একজন হাসিনা আক্তার এবং অন্যজন আফরোজা বেগম। প্রথমজনের সাথে আমার তেমন কোন কথা না হলেও দ্বিতীয় জনের সাথে মাঝেমাঝে কিছু কথা হত।দুজনকেই আমি ভালো শিক্ষিকা হিসেবে জানতাম। ইতিমধ্যে হয়ত শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষিকার সংখ্যাও বেড়েছে, সবাই স্ব স্ব কাজে অনেক বেশি যত্নবান এবং স্কুলকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন এই প্রত্যাশাই থাকবে আমার।

যেহেতু আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলাম তাই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমার পূর্ববর্তী দীর্ঘ সময়ে যারা বিদ্যালয়কে সেবা দিয়েছেন তাদের কথা একটু স্মরণ করতে হয়। আমি যতটুকু দেখেছি এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাঝে প্রাচীন এবং প্রবীণদের মাঝে উল্ল্যেখযোগ্য হলেন সিদলা নিবাসী মরহুম কফিলউদ্দিন মজুমদার, মারামুরা নিবাসী ডাক্তার ইউসুফ আলী মজুমদার মৈশাইদ নিবাসী সামসুল হক মজুমদার (ম্যানেজার), নওহাটার আবদুল হাই সরদার (জীবন বীমা) এবং মারামুরার আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন মজুমদার অন্যতম। পরবর্তী কালে স্কুল পরিচালনায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন আবুল হোসেন সরদার (ওড়পুর), আবুল বাশার মেম্বার, কামাল হোসেন মজুমদার (সিদলা) আমিনুল হক মজুমদার (মৈশাইদ) এবং রফিকুল ইসলাম ভুইয়া (গোয়ালঘর) সহ আরো অনেকে। এরপর দায়িত্বে আসেন আশরাফ উদ্দিন দুলাল পাটোয়ারী, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, খোরশেদ মাস্টার, সিরাজ মজুমদার, মানিক তালুকদার পর্যায়ক্রমে আনোয়ার মল্লিক, আনোয়ার উল্লাহ পাটোয়ারী, আলহাজ্জ হেলাল উদ্দিন মিজি, হাবিবুর রহমান লন্ডনী, মো. সেলিম লন্ডনী এবং ডাক্তার শাহনেওয়াজ সহ আরো অনেকে ।

বিজ্ঞাপন

আমি যখন বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ছিলাম তখন সভাপতি ছিলেন মরহুম জয়নাল আবেদীন মজুমদার। পরবর্তীতে আমি যখন সভাপতি হই তখন সহ সভাপতি ছিলেন আলহাজ্জ হেলাল উদ্দিন মিয়াজি এবং পরবর্তী সভাপতির কালে সহ সভাপতি ছিলেন সদ্য প্র‍য়াত আলহাজ্জ আনোয়ার হোসেন মল্লিক। আজ তিনি নেই। রামপুর বিদ্যালয়ের যে প্রবেশদ্বার টি বিদ্যমান, এর নির্মাণে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই ফটকটির নির্মাণের অনুপ্রেরণার কারিগর ছিলেন প্র‍য়াত প্রিয় শিক্ষত আলী নওয়াজ স্যার আর অর্থায়নে ছিলেন বাবু বিনয় কৃষ্ণ সাহা।

আমার সভাপতি কালীন সময়কার সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতার কথা মনে পড়ায় তাদের প্রতি আজ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যা কিছুই করেছি আমরা, ঐক্যমতের সাথেই করেছি।পরবর্তীকালে হেলাল উদ্দিন মিজি স্কুলের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে খোরশেদ মাস্টার এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। কালের সাক্ষী হিসেবে যা অনেক দিন অক্ষুণ্ণ থাকবে। একসময়ে স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে আসেন আমার আত্মার পরম আত্মীয় মরহুম আমিনুল হক মজুমদার সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্র মামুন মজুমদার এবং তার সাথে সদস্য হিসেবে উল্ল্যেখযোগ্য রামপুরের জাকির (মেঘনা) এবং মমিন ভুইয়া। তারাও তাদের সাধ্যানুযায়ী স্কুলের সুনাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন।

বর্তমানে কমিটিতে আছেন সভাপতি হিসেবে স্নেহধন্য আনিসুল ইসলাম মজুমদার সহ উদ্যমী ও প্রতিশ্রুতিশীল বেশ কয়েকজন। তাদের সময়কাল শেষ হওয়ার পরেই তাদের সম্পর্কে প্রকৃত মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।

(শেষ পর্ব পড়ুন শুক্রবার সন্ধ্যায়)
পপুলার বিডিনিউজ ডটকমের সঙ্গে থাকুন

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

ট্যাগ:

শীর্ষ সংবাদ:
ফরিদগঞ্জে  সড়ক দুর্ঘটনা দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ফরিদগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত চান্দ্রা বিকল্প সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত রাজারগাঁওয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন ফরিদগঞ্জে দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন আড়ুলী স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ও পুরুষ্কার বিতরন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জাকির মজুমদার চাঁদপুরে পাঁচতলা থেকে ছিটকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু মিশর থেকে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন হাসিনার শেষ ৫ বছরে ১৬ হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ড দ্য ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ তিন দফা জানাজা শেষে শায়িত হলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহাম্মদ স্যার চাঁদপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ড্রেজার ও ১০টি বাল্কহেডসহ ৩৮ জন আটক হাজীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক বছরের শিশুর মৃত্যু ফিল্মি স্টাইলে জিম্মি রুপালি ব্যাংকের শাখা, ডাকাতদের দুই দাবি বৃষ্টিবলয় শীতল: যেসব অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের আভাস বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নিয়ে যা জানাল আলমি শুরা কচুয়ায় ফেনসিডিল’সহ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেফতার নতুন পথের খোঁজে শাকিব