প্রিয় বিদ্যালয় (১ম পর্ব)
আমি ১৯৬৫-১৯৭০ সাল পর্যন্ত রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র ছিলাম। আমি পরবর্তীকালে অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য এবং দুবার সভাপতি ও ছিলাম বিদ্যালয় এর সভাপতির চেয়ে ছাত্র জীবনের স্মৃতিই অনেক বেশি স্মৃতিবহুল এবং অনেক বেশি গর্বের। ছাত্র হিসেবে আমি এই বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য আমার সহপাঠিদের নিয়ে মাটি কাটার কাজে অংশগ্রহণ করি। তাদের মাঝে উল্ল্যেখযোগ্য আনোয়ার হোসেন মল্লিক, এডভোকেট কাইয়ুম চৌধুরী, এডভোকেট হোসেন মজুমদার, মোস্তাফিজ মজুমদার, ইকবাল তালুদার,মজিবুর রহমান মজুমদার, হারুন মোক্তার ও রশিদ সরদার প্রমুখ।
এই বিদ্যালয়ের ভবন তৈরীতে রামপুর মাদ্রাসার মাঠ থেকে লেইজার পিরিয়ড এ দুটো করে ইট আনা সবার জন্য বাধ্যতামূলক কাজ ছিল। সেখানেও আমার প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ ছিল।
ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের সান্নিধ্যের কথা যদি কিছু না বলি তাহলে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় এ লেখাপড়া করার স্বার্থকতা কোথায়? ছাত্র হিসেবে আমি সান্নিধ্য পেয়েছি এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জুনাব আলী তালুকদার সাহেবের। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে নিজ বাড়ির ধান মাথায় বহন করে রামপুর বাজারে বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতনের কিছু অংশ দেওয়ার দৃশ্য ও আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি আরো সান্নিধ্য পেয়েছি প্রখ্যাত প্রধান শিক্ষক এবং বিখ্যাত ‘চাইল্ডস ইজি গ্রামার’ এর রচয়িতা মরহুম এম. ইদ্রিস বিএ,বিটি সাহেবের এবং তার সহোদর মরহুম বজলু গণি মজুমদার সাহেবের। তবে আমার প্রিয় প্রধান শিক্ষক ছিলেন গোয়ালভর নিবাসী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। যিনি পরবর্তী কালে কাস্টমস এর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রিয় প্রধান শিক্ষকদের মাঝে অসুস্থ অবস্থায় আজো বেঁচে আছেন পালিশারা নিবাসী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। আমি স্যারের সুস্থতা কামনা করি।
শহিদুল্লাহ স্যার এবং মহিউদ্দিন স্যার শুধু বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষকই ছিলেন না। দুজনই আমার ছাত্রজীবনের মেন্টর ছিলেন। শিক্ষা জীবনে প্রায় দুই বছর এই দুজনের সাথে একই কক্ষে অবস্থান এবং একই হাড়ির ভাত খাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল (সাবেক প্রাইমারির দোতালার কক্ষটিতে)।
শিক্ষকদের মাঝে এখনো যারা হৃদয়ের মণিকোঠায় বেঁচে আছেন, তাদের মাঝে উল্ল্যেখযোগ্য হলেন, বাবু মাধব চন্দ্র ভৌমিক। আমি নবম শ্রেনীর ছাত্র যখন, তিনি শ্রেনী কক্ষে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন -`চপরতবর্ষীকলা কুটিকাটি মাটি হেলা, গায়ে হলুদ হদুমালা, দাপুড় দুপুড় যায়।তারে দেখে চন্দ্রকলা ফুকি দিয়ে চায়।’
এটি কি? আমরা কেউ সেদিন পারি নাই। আপনারা কি কেউ জানেন?
মনে পড়ে, প্রফুল্ল কুমার শীল, পুনীল বিহারী সাহা, চাঁদপুর এর ডি এল পাল, তাপস স্যার, মাতৈন এর সিরাজ স্যার, সোলায়মান স্যার,নুরুল ইসলাম স্যার, আব্দুল খালেক স্যার, আব্দুর রশীদ স্যার সহ অনেকের কথা। এদের মাঝের অনেকেই আজ প্রয়াত। প্রয়াত সকল স্যারদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং জীবিতদের সুস্থতা কামনা করি।
সভাপতি কালীন সময়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ আজো বেঁচে আছেন। ঐ সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষকদের অন্যতম জনপ্রিয় আলী নওয়াজ স্যার বেঁচে নেই। স্কুলের প্রতি তার মমত্ববোধ ও দায়িত্বশীলতার কথা আজও মনে পড়ে।
সেই প্রাণ প্রিয় প্রতিষ্ঠানের যখন কোন সুসংবাদ পাই আনন্দে বুকটা ভরে উঠে। তেমনি যেকোন অপ্রীতিকর সংবাদে হৃদয় ব্যাথিত হয়ে ওঠে। রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর দুঃসংবাদ এর চেয়ে সুংসবাদ-ই আজীবন প্রত্যাশায় থাকবে।
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন বুধবার সন্ধ্যায়/ শেষ পর্ব পড়ুন শুক্রবার সন্ধ্যায়
(পপুলার বিডিনিউজের সঙ্গে থাকুন। ফেসবুক পেইজে লাইক দিন।)