সুন্দর হতে গিয়ে প্রতারিত হবেন না
লক্ষ্য করা গেছে, চর্মরোগ বিশেষ করে নারীদের মুখের ব্রণ, ব্রণজনিত দাগ কিংবা অন্য কোনো সমস্যার জন্যে কতিপয় ডাক্তার এমন কিছু ব্র্যান্ডের ক্রিম, লোশন, ওষধ প্রেসক্রাইব করেন যা অনেক বড় বড় নামকরা ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায় না। এমনকি বড় বড় শহরের নামকরা হাসপাতালের সামনের বিখ্যাত ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায় না। ডাক্তারকে জানালে তিনি কৌশলে উত্তর দিয়ে থাকেন।
প্রিয় পাঠক, এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে যা জানা গেছে ও বোঝা গেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। পাঠকের সতর্কতার জন্যে শেয়ার করছি।
একজন ভুক্তভোগী জানান, ‘বড় শহরের নামকরা এক ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মীকে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বললাম কোথায় পাওয়া যেতে পারে। তিনি বললেন টাকা অগ্রিম দিয়ে যান পরের সপ্তাহে পাবেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন এ ক্রিমগুলো অনেক দামী কিন্তু এখানে চলেনা। কেমন দাম তা শুনে আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। কোনোটা আড়াই হাজার, কোনোটা তিন/ চার হাজার পর্যন্ত। যাহোক, অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাধ্য হয়েই অগ্রিম টাকা দিয়ে পরের সপ্তাহে পাওয়া গেছে কিন্তু সব-কয়টা পাওয়া যায়নি।’
অনন্যোপায় হয়ে বিক্রয়কর্মীর সাথে আন্তরিকতা নিয়ে তার সাহায্য প্রার্থনা করলে সে ঐ ভুক্তভোগীর অসহায়ত্ব দেখে বলল, আপনি আরেক শহর থেকে এসেছেন। এতো জায়গায় না খুঁজে যে ডাক্তার দেখিয়েছেন তাঁর চেম্বার এর আশপাশের ওষুধের দোকানে খোঁজ করে দেখেন, পাবেন।’ বিস্ময় জাগে, এতো বড় দোকানে নেই। আর ওখানকার ছোট দোকানে থাকবে?’
কৌতুহল নিয়ে নির্দিষ্ট ডাক্তারের চেম্বারের সামনের ছোট দোকানে খোঁজ করে পাওয়া গেছে। ক্ষানিকটা বিস্মিত। পরে জানতে পারা গেল মূল কারণ।
দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু চুক্তিবদ্ধ ডাক্তার কেবল অর্থের লোভে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত (আদৌ সেগুলোর বৈধতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি) একই উপাদানের ক্রিম/ লোশন এর বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেগুলোর মূল্য দেশীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে ৮/১০ গুন বেশি। শুধু যেসব জায়গায় এসব লোভী ডাক্তাররা চেম্বার করেন সেসব জায়গার ফার্মেসীগুলোতে পাওয়া যায়। কারণ, দালালচক্র সেখানে পৌঁছে দেয়। রোগীদের পকেট কেটে নেয়া হয়।
সাধারণত এসব অর্থলোভী ডাক্তারদের খপ্পরে পড়েন ব্যাবসায়ী / প্রবাসীদের স্ত্রী / কন্যা, চাকরিজীবী নারী অথবা সচ্ছল পরিবারের নারী / কন্যারা। সুকৌশলে আলাপচারিতায় রোগীর আর্থিক অবস্থা বুঝে নেয়া হয়। কোনো কোনো নারী পণ করে বসেন ” খুবসুরাত কিলিয়ে কুচভি করেগা”। এমন মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতাকেও কাজে লাগানো হয়। অধিকাংশ রোগী যেহেতু নারী, তাই স্পর্শকাতর বটে। অনেক সময় তাদের বুঝিয়ে বলাই মুশকিল হয়ে পড়ে প্রেসক্রিপশনে লিখা একই নামের ক্রিম কেনা না হলে। অথচ একই Generic Name এর ক্রিম / ওষুধ বাংলাদেশের নামকরা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এগুলোর দামও হাতের নাগালে।
তাই, রোগী সাধারণ সাবধান! এখন থেকে চড়া মূল্যের ওষুধের Generic Name দেখে দেশীয় নামকরা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির একই উপাদানের ওষুধ পাওয়া গেলে তা ক্রয় করাই উত্তম হবে। আমাদের দেশীয় ওষুধ বিশ্বমানের। সেগুলো বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
পুনশ্চঃ এই লেখাটি সকল ডেডিকেটেড ডাক্তারের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে লেখা হলো। তারপরও কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।