আমাদের গন্তব্য কোথায়?
আপাতত দৃষ্টিটিতে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইতালি-স্পেনসহ সংক্রমণের শীর্ষে থাকা দেশগুলো ক্রমে স্বাভাবিক হচ্ছে, দেশগুলোতে সংক্রমণ অব্যাহত থাকলেও কয়েক সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা নমনীয় করোনা।
ইউরোপ-পশ্চিমায় নমনীয় হলেও করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক পথে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিলও অব্যাহত রয়েছে।
ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলের ফলে সংক্রমণের সব পথ খোলা থাকায় সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে; তেমনি কমিউনিটিতে আরও বেশি বিস্তার ঘটতে পারে রোগটির। বিশেষ করে নতুন নতুন জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
গার্মেন্টস কারখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফকর, মার্কেট-শপিং সেন্টারসহ লকডাউন শিথিল হওয়ায় মানুষের আনাকোনা বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতি শুরু হলে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে এ মাসের শুরুতেও সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছিলেন, এসব সিদ্ধান্তের কারণে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না পেলে ও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মধ্য মে’র পর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোনদিকে যাবে, তা বোঝা যাবে। একই সঙ্গে তারা মে মাসকে সবচেয়ে ‘ক্রিটিক্যাল’ বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের এ পূর্ব সতর্কতাই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। গতকাল ২৮ হাজার করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদিনও ভেঙে গেছে আগের দিনের রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৭৩ জন। ফলে দেশে মোট করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ২৮ হাজার ৫১১ জনে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কী ‘পিক’ বা ‘চূড়ার’ দিকে যাচ্ছে? এবিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক বলেন,‘ লকডাউন একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের সংক্রমণের ধারাটা দেখার জন্য। সংক্রমণ বাড়ছে, কখন গিয়ে থামছে, এ লকডাউনের মাধ্যমেই সেটা দেখে। কিন্তু আমাদের যেটা সমস্যা, ঘুরেফিরে সেই টেস্টের কথাই বলতে হয়। আমরা যতক্ষণ টেস্ট বাড়াতে, সহজলভ্য করতে এবং মানসম্মত করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধারণা করা সম্ভব নয় যে আমরা কখন পিকে পৌঁছব, কখন থামব।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও সরকার গঠিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, ‘তাদের বিশ্লেষণ অনুসারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখানোর আগে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণের চরম সময়কাল চলবে।’
গাণিতিক পদ্ধতি এবং মহামারীবিদ্যার সূত্রের ভিত্তিতে তাদের বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জুনের শেষের দিকে সংক্রমণের হার কমতে থাকবে বলে আশা করা যেতে পারে।’