ফিরে দেখা রাজনীতি (পঞ্চম পর্ব)

মোঃ খায়রুল কবির আবাদ
আপডেটঃ জুলাই ৪, ২০২০ | ৫:৪২
মোঃ খায়রুল কবির আবাদ
আপডেটঃ জুলাই ৪, ২০২০ | ৫:৪২
Link Copied!

কয়েকজন মরহুম ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে চাই- এক. হুমায়ুন কবির, টামটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছিলেন। তার সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের একজন স্বচ্ছ সৎ ও আদর্শিক সৈনিক হিসেবে ১৯৯১ সালে একমাত্র নৌকার প্রার্থী রব সাহেবের পক্ষে কাজ করে শাহারাস্তির ইউনিয়নে পাশ করাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

দুই. কাজিরগাঁওয়ের ছালাম পাটোয়ারী (ছালাম ড্রাইভার)। তিনি রাজনীতি করতেন কিনা জানা নেই। তবে ১৯৯৬ সালে ব্যক্তিগত ভাবে আমার সাথে সুহিলপুর কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন। মনে আছে প্রথম বারের মতো সে সময় আওয়ামী লীগ সুহিলপুর কেন্দ্রে পাশ করেছিলেন। প্রচুর খেটেছেন এবং টাকাও খরচ করেছিলেন। সেই দিকে কাশিমপুর একটি গ্রাম ছিল যেখানে অধিকাংশ হিন্দু ভোটার। যেতে ছোট একটি খাল পড়তো, ব্রিজ ছিল না। ছালাম ভাই আর আমি তিনবার বাঁশের সাঁকো দিতে হয়েছিল। কারণ প্রথম দুইবারই বিরোধী দলের লোক ভেঙ্গে দিয়ে বাঁশ নিয়ে যেত। যেন হিন্দু ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার সাথে হাজিগঞ্জ গেলে দেখা ও কথা হতো।

তিন. রাজারগাঁওয়ের লোকমান পাটোয়ারী। যিনি জাতীয় পার্টি করতেন বলে শুনেছি। কিন্ত ১৯৯৬ সালে প্রচুর খেটেছেন।

বিজ্ঞাপন

চার.হোসেন ইমাম হায়দার, খুব বন্ধু, কর্মী বান্ধব নেতা ছিলেন। যার কাছে আমি খুব ঋণী। তার বাসায় প্রচুর যেতাম। হাজিগঞ্জ গেলে তার বাসায় না গেলে, গল্প না করলে, ভালো লাগতো না। তার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় রশিদের সাথে অনেক আঘাত পেয়েছেন। চেয়েছিলেন তিনি সভাপতি আর রশিদ সাধারণ সম্পাদক হউক। কিন্তু রশিদের জন্য হয়নি। অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম রাশিদকে কিন্তু রাজি করাতে ব্যার্থ হয়েছি। নিজেকে দোষী মনে হয়েছে বার বার। কারণ রশিদকে আলী আজ্জম হোসেন, ইমাম হায়দারের পরিষদে সিনিয়র সহ-সভাপতি করতে আমি ও দীলিপ বাবু চাপ দিয়েছিলাম। রশিদ মনে করতো যেহেতু সে সিনিয়র সহ-সভাপতি তাই সাধারণ সম্পাদকের উপরে। কিন্তু রাজনীতিতে হোসেন ইমাম হায়দার রশিদের অনেক অনেক সিনিয়র এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রচুর অবদান। অভিমানে ঢাকায় চলে আসেন পরিবার নিয়ে। তারপরও প্রতিদিন অন্তত ঘন্টা কথা বলতাম ফোনে। খুব প্রিয় এবং ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। রব মামার সময় এলাকায় অত জড়িত ছিলাম না। কিন্তু হায়দার ভাইর মতো নেতার যার বাসায় সবার জন্য দরজা উন্মুক্ত থাকতো চব্বিশ ঘণ্টা আমি এরপর আর দেখিনি।

পাঁচ.মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মজনু ভাই আমার ওয়ার্ডের কমান্ডার এবং কমিশনারও ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে রাফিক সাহেবের জন্য কাজ করেছেন।

উক্ত শ্রদ্ধেয় মরহুমদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা এবং উনাদের আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। আরও অনেকের কথা আমার মনে নেই বা কাজ করার সুযোগ হয়নি সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। ক্ষমা করবেন আমাকে কিছু করতে পারিনি তাই ঋণী রয়ে গেলাম সবাইর কাছে।

বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা রাজনীতি (১ম পর্ব)


২০০৬ সালে বিএনপির বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা বৃদ্ধি ছিল সূদুর প্রসারি ষড়যন্ত্র। যার ফলশ্রুতিতে শুরু আওয়ামী লীগ সহ সকল বিরোধী দলের আন্দোলন। তার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আশা করে হাজিগঞ্জ-শাহারাস্তি এলাকায় ১৯৭১ সালের শান্তি কমিটির সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ধেররার আবেদ শাহ ছেলে বাহাদুর শাহকে আওয়ামী জোট নমিনেশন দেন। হাজিগঞ্জ আওয়ামী লীগের কিছু জনবিচ্ছিন্ন নেতা এটাতে খুশি হলেও মুক্তিযুদ্ধের সকল মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ধানমণ্ডি শেখ হাসিনার বাসার সামনে জড়ো হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন। সেই সময় কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি চুপচাপ থাকতে বরং বাহাদুর শাহ পক্ষে আস্তে আস্তে বলতে। যদিও তা জনসমর্থন পায়নি। যখন ততকালীন শেষ প্রধান বিচারপতি এসব আন্দোলনের মুখে তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে রাজি হননি। তখন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন সাহেব নিজেই তার প্রধান হয়ে নির্বাচনের দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি একটি দলের হয়ে অর্থাৎ বিএনপির ঘরনার একজন হিসাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তাই বিরোধী দলগুলো তার এই পদক্ষেপের নিন্দা করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় ফখরুদ্দীন সাহেবকে প্রধান করে জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দৃশ্যপটে হাজির হন। প্রথম দিকে তাদের কিছু পদক্ষেপ যেমন দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযান ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ জনগণের মাঝে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মনে আছে সেই সময় কচুয়ার সন্তান হাজিগঞ্জ হাই স্কুলের মেধাবী ছাত্র আমার এক বছরের সিনিয়র কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিসিএস ক্যাডার সৎ বলে বিবেচিত দেলোয়ার হোসেন (সাবেক ভূমি সচিব ও রেক্টর লোক প্রশাসন কেন্দ্র, সাভার) দুদকের সচিব হন বা ছিলেন, যখন কমিশনের কোন চেয়ারম্যান ও কমিশনার ছিলেন না। দেলোয়ারকে খুব ঘাউড়া সৎ অফিসার হিসাবে সবাই জানত। ফকরুউদ্দিন মঈন উদ্দিন সরকারের জনসমর্থন রাতারাতি তুঙ্গে উঠে যায়। তার ফলশ্রুতিতে তারা শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া সহ প্রচুর রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করেন।

ফিরে দেখা রাজনীতি (তৃতীয় পর্ব )


অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন দুদক দ্বারা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইষ্ট কোস্ট গ্রুপের মালিক আজম চৌধুরীকে দিয়ে চাঁদা বাজির মামলা করান। শেখ সেলিমকে দিয়েও বিভিন্ন সাক্ষ্য দেয়ান। (এখানে উল্লেখ্য যে দুইজন রাজনীতিবিদকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ নয় একজন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন (মানিক মিয়া ছেলে হিসাবে অন্য রকম ও শেখ সেলিম (যার সাথে শেখ মনির মিল খুঁজে পাইনি)। দুইজনকে আমি সুট কোট ছাড়া কখনো দেখিনি। দুই নেত্রীকে সংসদ ভবনের একই বাড়িতে দুইটি আলাদা তালায় বন্দী করে রেখেছিলেন। সে সময় দুই দলের প্রধান দুই নেত্রীকে বাদ দিতে দলের মধ্যে সংস্কারপন্থী হিসাবে কিছু নেতা বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে খুব সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা করেন। মনে পড়ে ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশির নেতৃত্বে একটি নতুন দলের জন্ম হয়। দুই প্রধান দলের মধ্যে মূলত দুটি ধারা চলতে থাকে। কিন্তু উপমহাদেশের রাজনৈতিক ধারা মোতাবেক বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী তারই কন্যা শেখ হাসিনা ও জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারী উনার স্ত্রী ব্যতীত জনগণের কাছে অন্য কেউ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

ঐ সময় বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহেরা খাতুন, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, দীপু মনি সহ আওয়ামী লীগের এক ঝাক আইনজীবী প্রায় প্রতিদিন সংসদ ভবন এলাকায় নেত্রীর মুক্তির জন্য স্লোগান দিতেন। ব্যারিস্টার রফিকুল হক সাহেবও দুই নেত্রীর পক্ষে আইনি লড়াই চালাতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তত্তাবধায়ক সরকারের ও সেনাবাহিনীর মাঠে কর্মরত কিছু সদস্যের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে খুব তাড়াতাড়ি সমগ্র সরকারের জনপ্রিয়তায় ধ্বংস নেমেছিল। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তৎপরতা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বেগের পর সরকার সেখ হাসিনাকে (২১ আগষ্টের গ্যানেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত) লন্ডনে চক্ষু চিকিৎসার জন্য যেতে প্যারলে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। নেত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। কিন্তু চিকিৎসা শেষে ফিরে আসতে সরকার নিষেধাজ্ঞা দেন যাতে কোনো এয়ারলাইনস উনাকে বহন করে দেশে ফেরত না আনতে পারেন।

ফিরে দেখা রাজনীতি (দ্বিতীয় পর্ব)


শেখ হাসিনা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধুর মতো নাছোড়বান্দা দেশে ফিরবেনই। বিশ্বের প্রায় নামকরা সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরার, ভারতের এনটিভি ইত্যাদি তাঁর সাক্ষাৎকার সহ প্রায় প্রতিদিন সংবাদ প্রচার চলছিল। দেশের ত্যাগী আওয়ামী নেতা কর্মীদের দৃঢ় প্রতিবাদ এবং বন্ধু দেশ ভারত, যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে সেনাবাহিনী সমর্থক সরকার তাঁকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে সরকার অনুধাবন করতে পারলেন যে দুই প্রধান দলের নেত্রী সহ নেতাদের মুক্তি না দিলে বেশি দিন তারা অবৈধ ভাবে চলতে পারবেন না। তাই মুক্তি দিয়ে একটি নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে পদক্ষেপ নিলেন। বিতর্কিত ভোটার তালিকার ভুল সংশোধন করে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব বন্দোবস্ত করলেন। যেহেতু সেনাবাহিনীর ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা হুমকির মুখে তাই সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে দুই নেত্রী সহ সকল নেতাদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করলেন। ২০০১ সালের আমাদের এলাকার বিএনপির সাংসদ এম এ মতিন সাহেব উত্তরায় থাকতেন। আমিও যেহেতু উত্তরায় বসবাস শুরু করি তাই পিতার ছাত্র হিসাবে এবং পূর্ব পরিচিত হিসাবে তাঁর সাথে রাজলক্ষ্মী দেখা হতো। তাঁর বসার একটি ছোট রুম ছিল, তাই মাঝে মাঝে অনুরোধে চা খেতে যেতাম এবং নানান আলাপ আলোচনা করতাম। দেখতাম তারেক জিয়ার কর্ম কান্ড নিয়ে উনি খুবই অসন্তুষ্ট। এখানে উল্লেখ্য যে তাঁরা কিছুটা বাম ঘেষা হিসাবে ততকালীন সাধারণ সম্পাদক মান্নান ভূইয়ার ভক্ত বা অনুসারী হিসেবে দলে গণ্য হতেন। তাই তাঁর দলের একজন অপছন্দের হিসাবে নমিনেশন পাবেন না জেনে, মনে মনে নির্বাচন না করার চিন্তা করছিলেন। আমিও তাঁকে একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসাবে নিজের ইমেজ রক্ষা করে থাকতে অনুরোধ করতাম। আমি আর তিনি দুই জন বিপরীত দলের হলেও খোলামেলা আলাপ আলোচনা চলতো।

ততকালীন সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথম দিকে ঘোষণা বা চিন্তা করেছিল সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন একসাথে করবেন। হঠাৎ রফিক সাহেবের ফোন আমাকে তার রানিংমেট হিসাবে উপজেলাচেয়ারম্যান প্রার্থী হতে। আমি অনীহা প্রকাশ করে সম্মুখ রাজনীতি ও নির্বাচন না করতে আমার শিক্ষক পিতার আদর্শ ও নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করলাম। তবে সাথে সাথে সব অতীতের দ্বন্ধ বিভেদ ভুলে আমি এলাকার আরেক নেতা ফজলুল হককে ফোন করে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে আহবান জানালাম যেন রাজনীতিতে দলে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। রফিক সাহেবকে রাজি করালাম। ফজলুল হক নিজে সম্মতি জানিয়ে তাঁর পরিবারের সাথে পরামর্শ করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। কিন্তু আর ফোন করেননি। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের সেই পরিকল্পনা থেকে সড়ে আসে। ফলে বিষয়টি আর আলোচিত হয়নি। ২০০১ থেকে ২০০৭ বিএনপি ও সেনাবাহিনীর শাসন ইত্যাদির ফলে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য অনুযায়ী সংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠে। মাঠ পর্যায়ে ত্যাগী নেতা কর্মীরা সব ভুলে দলকে ক্ষমতায় নিতে আবারও একতাবদ্ধ হন। যদিও একটি অংশ রফিক সাহেবের বিরুদ্ধে অনেকে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালান। কিন্তু শেখ হাসিনা সবদিক বিবেচনা করে ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে দলের নমিনেশন ঠিক করেন। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বিতর্কিত কর্ম কান্ড, হাওয়া ভবন বদনাম, তারেক জিয়ার গ্রেফতার এবং দুর্নীতি মামলা মাথায় নিয়ে লিখিত দস্তখত দিয়ে লন্ডন চলে যাওয়ার সুযোগ নেয়া। এসবের ফলে খুবই অগোছালো অবস্থায় ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকলে দুর্বল আর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী থাকে। ফলে বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসাবে চিহ্নিত কেউই নমিনেশন পাননি। পরিবর্তে পান অনেক অপরিচিত নেতা বা ব্যক্তি যাদের এলাকায় অত নাম ছিল না।

হাজিগঞ্জ-শাহারাস্তি এলাকায় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম পূর্বে এক মেয়াদের এমপি থাকায় পরিচিতির সংকট ছিল না। অন্যদিকে বিএনপি অনেকটা অপরিচিত ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হককে নমিনেশন দেন। স্বভাবতই জনপ্রিয় বিএনপি নেতা মতিন সাহেব নমিনেশন না পাওয়ায় উনার সমর্থক দলের বিরাট অংশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। যা রফিক সাহেব পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছেন। আমি রফিক সাহেবের পরামর্শে হাজিগঞ্জের বাড়িতে বসেই অনেক দিক ম্যানেজ করেছিলাম। আমাকে গাউছিয়া রেষ্টুরেন্টের মালিক পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল সময়ে সময়ে এসে খবর দিয়ে এবং নিয়ে যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছিল। আমি প্রয়াত বাবুলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আওয়ামী লীগ সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা জীবন দিয়ে দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাদের মধ্যে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবদুর রশিদ, অধ্যাপক স্বপন কুমার পাল, এবং উপজেলার দায়িত্বে থাকা আলী আজ্জম মজুমদার ও হোসেন ইমাম হায়দার, মালেক, চঞ্চল, মামুন, বাবুল, আবদুল মান্নান (বর্তমানে অসুস্থ) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিঠুন ভদ্র সহ সকল ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের ত্যাগী, নির্যাতিত নেতা কর্মী বৃন্দ ( সবাই নাম জানা এবং লেখা আমার সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হয়নি) অন্যতম। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রফিক সাহেব প্রচুর ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।

ফিরে দেখা রাজনীতি (১ম পর্ব)


একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠন করেন। আমার মা শুকরিয়া হিসাবে আবারও অনেক মসজিদে কোরান শরিফ দেন বলে পরে শুনেছি। ক্ষমতায় আসার পর এবার শেখ হাসিনা তাঁর জেলে থাকার সময় যে সব নেতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত তার মুক্তির জন্য সংসদ ভবনের সামনে মিছিল স্লোগান এবং আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন তাদের সবাইকে বিভিন্ন ভাবে পুরস্কৃত বা মূল্যায়ণ করেন। চাঁদপুরের দীপু মনি প্রথম বারের এমপি হয়ে প্রথম নারী হিসাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এভাবে নতুন অনেকেই মন্ত্রিত্ব পান। সংস্কারপন্থী হিসাবে কথিত সবাই বাদ যান। এইভাবে এক নতুন শেখ হাসিনাকে মানুষ চিনতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ত্রিশটি আসনও পাবে না মন্তব্য করেছিল, আল্লাহর কি লীলাখেলা সেই বিএনপি তার থেকেও আসন কম পেল এবং দল বিরাট অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ল। যা আজও চলছে।

যতটুকু মনে পড়ে সম্ভবত ২০০৯ এর প্রথম ভাগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেন। বন্ধু আবদুর রশিদ তার আগেই একদিন মালেককে সাথে নিয়ে আমার উত্তরায় বাসায় হাজির। সে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে আগ্রহী। শর্ত অনুযায়ী তাকে ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য তখন পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপির মান্নান খান বাচ্চু। আমি এবং আমার স্ত্রী একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে শিক্ষকতা ছেড়ে নির্বাচন করার পক্ষে ছিলাম না। যাহোক তাদের দুইজনের অনুরোধে এমপি রফিক সাহেবের কাছে গেলাম। তারা বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করলেন। পরবর্তীতে রশিদ শিক্ষকতা ছেড়ে নির্বাচন করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। তফসিল অনুযায়ী তাকে নমিনেশন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। হঠাৎ রাত দশটার পরে হাজিগঞ্জ থেকে তার ফোন এবং কাঁদছে। জানতে পারলাম কিছু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা তার নমিনেশন জমা দিতে নিষেধ করেছে বা বিরোধীতা করছে। আমি তার কথা শুনে সবাইকে ফোন করলাম, তারা রশিদের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্ষোভ প্রকাশ করল, আমি বুঝালাম। যেহেতু তারা আমাকে খুব সম্মান করত তাই মেনে নিল। খারাপ ভালো যাই হউক সে রব সাহেবের তথা মিয়া পরিবারের সৃষ্টি। তাদেরকে মেনে নিতে বললাম তারাও আমি বলাতে না করতে পারল না। রশিদকে ফোন করে জানালাম, কিন্তু সে জানাল তার ছেলে ফাইল নিয়ে সরিয়ে রেখেছে, তাই বাধ্য হয়ে তার ছেলের সাথে কথা বলে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে রশিদকে কিছু পরামর্শ দিলাম। মালেক ও খসরুকে সেই মতো তার সাথে থেকে সহযোগিতা করার কথা বললাম। এবারও সংসদ নির্বাচনের মতো একজন নতুন অপরিচিত রামপুরের মাওলানা নজরুলকে বিএনপি প্রার্থী হলেন। ফলে সংসদ নির্বাচনের মতো রশিদও জয়ী হলেন।

(আগাামী শনিবার পড়ুন শেষ পর্ব।)

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

ট্যাগ:

শীর্ষ সংবাদ:
সেচ্ছাসেবী সংগঠন বাতিঘর মানব কল্যাণ সংস্থার বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ মায়া’সহ আ.লীগের পাঁচ নেতার শিল্প প্লট বাতিল হচ্ছে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ চাঁদপুরে ৪ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় আওয়ামীলীগের মামলা কচুয়া থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ এম. আবদুল হালিম বিচারিক ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আসছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ হাজীগঞ্জে আই বি ডব্লিউ এফ সংস্থার সভা  ভারতের বিপক্ষে চাপে থাকাটাই আমাদের জন্য সুবিধাজনক বলাখাল কলেজে ঈদে মিলাদুন্নবী সা: পালিত  ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন তামিম সৌদি ফেরত প্রবাসীদের ৫ দাবি জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বিচারপতি মানিকের কখন বুঝবেন সম্পর্কে বিরতি প্রয়োজন রায়চোঁ সুন্নীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে জসনে জুলুস অনুষ্ঠিত হাইমচরে ছাত্রদের ওপর হামলাকারী নাজির এখন প্যানেল চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিলো আ.লীগ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা যুবক ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার