ফরিদগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে কোটি টাকার মাছ ও উঠতি ফসলের ক্ষতি
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিন্মাঞ্চলসহ মৎস্য ও ধান চাষীদের প্রজেক্টগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া সাধারণ ও খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো নিধারুণ কষ্টপোহাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে চলাচলের গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে দূভোগ বেড়েই চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলার সিআইপি বাঁধের ভিতরে জলাবদ্ধাতায় মাছের প্রজেক্টগুলো পানিতে ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, যদি পাউবি সিআইপি বাঁধের ভিতরের অংশের পানি কমিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদেও এ ক্ষতি হতো না। তাছাড়া বৃষ্টি যতই বেড়ে চলছে পাউবি ততই গাফিলতি করে চলছে।পাউবির এমন আচরণে হতবাক সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। ক্ষতি গ্রস্ত চরগুলো হচ্ছে, চরগুদাড়া দক্ষিণ .চর গুড়াদা উত্তর , উত্তর চর , রাজাপুরের চর, ধানুয়া চর, দক্ষিন চর, পূর্ব চর, খেরির চর, কলেজের চর, চর বসন্ত চরসহ অনেকগুলো চর । প্রতিটি চরে কয়েক কোটি টাকার মাছ চাষ চলছে। পানিতে তলিয়ে গিয়ে অনেক মাছ চলে গেছে। চরগুদাড়া দক্ষিণ অংশের চাষী মোঃ ওসমান গনী রুবেল পাটওয়ারী জানান, আমার প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চার পাশ জালদিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। পানি না অপসারণ করায় আমাদের এত বড় ক্ষতি হয়েছে। চরগুদাড়া উত্তর অংশের চাষী মোশারর্ফ হোসেন সুমন পাটওয়ারী জানান, আমার প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধার দেনা করে বিনিয়োগ করা অর্থ কিভাবে পরিশোধ করবো তা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। পানি কমিয়ে রাখলে আমাদের এ ক্ষতি হতো না। ধানুয়া চরের চাষী সাইফুল মেম্বার ও স্বপন খান জানান, দুটি চরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে । গত টানা বৃষ্টিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি ক্ষতি হয়েছে। ধানুয়া এলাকার পুকুরে মাছ চাষী মোঃ মনির হোসেন জানায়, আমার চাষ করা ৩টি পুকুর থেকে ৩/৪ লাখ টাকার মাচ ভেসে গেছে। উপজেলার চর পোয়া এলাকার সালাউদ্দিন ও সালেহ আহমদের দুটি প্রজেক্টের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। আপ্রান চেষ্টা চালিয়েও মাছ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কেরোয়া এলাকার মৎস্য চাষী আ: রব জানান,আমার বালু চর ও রাজাপুরের চরে ৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এ পর্যন্ত চার পাশে জালদিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করেও প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাণপন চেষ্টা করেও আমারা ব্যর্থ হতে হয়েছে। সিআইপি বাধেঁর পানি অপসারণে গাফিলতি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লোকসান কোনভাবেই কেঁটে উঠার মতো নয়। এিেদকে ধান চাষী রেজু মুনসী, সওকত ,দুলাল ,আবু তাহেরসহ অনেকেই জানান, আমাদেও বীজ তলায় চারাগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া যে জমিতে ধান রোপন করবো সেখানে পানি বৃদ্ধিতে ধান রোপন করতে পারছিনা। উঠতি শাক-সবজীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে কেরোয়া এলাকার সবজী চাষী হাবিবুল্যাহ জানান, আমার লাউ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সওকত আলী জানান, উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । পানি অপসারনের বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। তিনি আরোও জানান, ১০ হাজার ৭শতটি পুকুর , ৫০ মাছের প্রজেক্ট রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ জানান, ৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে। পানির কারণে কিছু জমিতে আমন রোপন করলেও অধিকাংশ জমিতে এখনও রোপন করতে পারেনি ।তাছাড়া বীজ তলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমানোর জন্য আমরা লিখিত ভাবে পাউবিকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান,পাউবিকে পানি কমানোর জন্য বলা হয়েছে। তারা পানি অপসারন করছে। তিনি আরোও জানার ৫নং উনিয়নের একটি অংশে সিআইপি বেড়ি বাধেঁর ভিতরে পানি লিকেজ হচ্ছে তাই পানির পরিমান বেড়ে গেছে। কৃষি দপ্তর থেকেও পানি অপসারণের জন্য অবহিত করা হয়েছে।